গানের জন্য সঙ্গীতশিল্পী সায়ান-কে জেলে যেতে হয়নি

34
গানের জন্য সঙ্গীতশিল্পী সায়ান-কে জেলে যেতে হয়নি
গানের জন্য সঙ্গীতশিল্পী সায়ান-কে জেলে যেতে হয়নি

Published on: [post_published]

সঙ্গীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান কে নির্দিষ্ট একটি গান গাওয়ার কারনে জেলে যেতে হয়েছিল –এমন একটি গুজব ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বার্তা সম্বলিত ওই গানটি অনেকে শেয়ার করে ক্যাপশনে সায়ান এর জেলে যাওয়ার কথা জানাচ্ছেন। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, সায়ানের জেল খাটার এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা । মূলধারার গণমাধ্যম অনুসন্ধান এবং সায়ানের সাথে আলাপসূত্রে ফ্যাক্টওয়াচ এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।

গুজবের উৎস 

“ধানের শীষে ভোট দিন” নামের পেইজটি এই ভিডিওটি প্রকাশ করে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে, তবে এর আগে ক্ল্যাসিক বাবু নামের এই ব্যক্তি ভিডিওটি প্রকাশ করে ১১ সেপ্টেম্বরে। দেখুন এখানে

পরবর্তীতে আরো অনেকগুলো পেইজ এবং প্রোফাইল থেকে এই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। দেখুন এখানে, এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

৩১ আগস্ট তারিখে ওয়ালি আফনান শাফায়েত নামের একজন এই গানের পুরো সাত মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করেছেন, দেখুন এখানে, তিনি শিল্পীর গ্রেফতারের কোনো দাবি করেন নি।

অনুসন্ধান

১) এই গানটির যে শিরোনাম দেয়া হয়েছে “কি করেছে তোমার বাবা, কি করেছে স্বামী

গল্প সেসব তোমার চেয়ে কম জানি না আমি” সেটি এই গানের শিরোনাম নয়। গানটির নাম “আমিই বাংলাদেশ”, গানটি লিখেছেন, সুর করেছেন, এবং গেয়েছেন সায়ান নিজেই। গানটি শিল্পীর ২০০৮ সালের এলবাম “সায়ানের গান” এর।

একুশে টিভির অনুষ্ঠানটির সঠিক তারিখ জানা যায় নি, তবে এই গানের ক্লিপটি কমপক্ষে ১৩ বছর আগের, Bondhu68 নামের একটি চ্যানেল এই ভিডিওটি প্রকাশ করে ১৬ অক্টোবর ২০০৮ সালে। দেখুন এখানে

একই অনুষ্ঠানের আরেকটি ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায় যেখানে সায়ান এবং উপস্থাপিকা দুইজনকেই একই পোশাকে দেখা যায়, এবং সে ভিডিওটিও ১৩ বছর আগের, আপলোড করা হয়েছে nasim23 নামের একটি চ্যানেলে ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে। দেখুন এখানে

এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে সায়ানের গানের অনুষ্ঠান দেখে সামহোয়্যার ইন ব্লগে পল্লী বাউল নামের একজন ব্লগার তার মতামত লিখেছিলেন। তিনি লিখেন-

সায়ান, বাংলা গানের জগতে এক নতুন বিস্ময়। গতরাত ১২টার পর হতে ৩টা পর্যন্ত একুশে টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে একের পর এক জীবনমুখী গান গেয়ে শোনান সায়ান। গানের সাথে সাথে তার চমৎকার গিটার বাজানো এবং একইসাথে মাউথ অর্গান বাজানো আপনাকে মুগ্ধ করবেই। কালকে যারা অনুষ্ঠানটি দেখেছেন তারা আমার সাথে একমত হবেন বাংলাগানের ভবিষ্যত উজ্জল তারকা সায়ান। নিজে গান লেখেন নিজেই সুর করেন, অপূর্ব তার গানের কথা। একমাত্র সুমন নচিকেতার গানের সাথে মিল খুজেঁ পাওয়া যায় সায়ানের গানের। চমৎকার কথাও বলেন সায়ান। আমি যতটুকু জানি শৈশব হতেই একটা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছেন সায়ান। তার সংগ্রামের কথা পাওয়া যায় তার গানে। ব্যাক্তিগত জীবনে শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাইয়ের মেয়ে অর্থাৎ হালের অতি জনপ্রিয় গায়ক হাবিবের চাচাতো বোন সায়ান। কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানে কখনো তাকে এই পরিচয়ে পরিচিত হতে দেখিনি। নিজের পরিচয়ে এগিয়ে যাক সায়ান। জয়তু সায়ান।” 

 

২) ২০০১ সালের লেখা এবং ২০০৮ সালে গাওয়া এই গানের কারণে ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানকে কখনোও গ্রেফতার হতে হয়েছিল এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

এ ব্যাপারে ফ্যাক্টওয়াচ ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানের সাথে  যোগাযোগ করলে তিনি গ্রেফতারের দাবি নাকচ করে দেন। ফ্যাক্টওয়াচ-কে তিনি জানান-

” “আমিই বাংলাদেশগানটি নিয়ে যে খবরটি হয়েছেসেটা ভিত্তিহীন। ভিত্তিহীন খবর কেন এবং কারা তৈরী করে,তা আমার বোধগম্য নয়।তবে এই উদ্দেশ্যের মধ্যে ভালো কিছু আছে বলে মনে হয় না।

আমি  জেলে যাইনি।আর এই গান আমি লিখেছি, ২০০১ সালে, প্রকাশিত হয়েছে ২০০৮ আমার প্রথম আ্যলবামে। এই গান নিয়ে কোথাও কখনো কোন সমস্যা হয়নি।এখানে সমস্যা হবার মত কিছু আছে বলেও আমি মনে করি না।আমি গানের মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করি।মনের কথা বলার চেষ্টা করি।কিন্তু সেটা করতে গিয়ে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ না করার চেষ্টাও আমার থাকে। এর বেশী কিছু এই বিষয়ে আমার বলার নেই। আর মিথ্যা খবরে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে এসব বিষয়কে বাড়তি গুরুত্ব দেয়াটার পক্ষপাতিও আমি নই।

সারমর্ম

ভিডিওতে করা দাবি যে এই গানের কারণে জেল খাটতে হয়েছিল, এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ বা তথ্যসূত্র পাওয়া যায় নি। ২০০৮ সালের এ গানের কারণে শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানকে কখনো গ্রেফতার হতে হয় নি। তাই এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ গুজব বলে চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.