বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছান। এর পরে তার সেখানে অবস্থানরত কোনো ছবি বা ভিডিও নির্ভরযোগ্য গনমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ফেসবুকে শেখ হাসিনার দুইটি আলাদা আলাদা বক্তব্যের ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, এগুলো ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের পরে ভারত থেকে নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার ভিডিও। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার ভিডিওগুলো ভারতে নয় বরং, তার দেশত্যাগের অনেক আগে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বাংলাদেশেই ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে, এই ভিডিওগুলোর সাথে নরেন্দ্র মোদীর আলাদা আলাদা ভিডিও ক্লিপ সম্পাদনা করে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল ভিডিওগুলো বিকৃত।
এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনা ভাষণ দিচ্ছেন যেখানে বিভিন্ন সময় নরেন্দ্র মোদীকেও দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে এটা ভারত থেকে নরেন্দ্র মোদীর সামনে শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার লাইভ ভিডিও। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মূলত নরেন্দ্র মোদী ২৫ আগস্ট ২০২৪ এ মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে লাখপতি দিদি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। ‘লাখপতি দিদি’ হচ্ছে ভারতের সকল নারীদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে মোদীর সরকারের একটি প্রকল্প। নরেন্দ্র মোদীর এই সম্মেলনে যোগদান করার একটি ভিডিওর সাথে ২১ আগস্ট ২০২৩ এ গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভিডিও সম্পাদনা করে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানটি ঢাকার গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এই ভিডিওতেও শেখ হাসিনার বক্তব্যের মাঝে নরেন্দ্র মোদীকে দেখানো হয় এবং একই দাবি করা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভিডিওটি হচ্ছে ৩ নভেম্বর ২০২৩ এ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানের। সেখানে শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের ভিডিওর সাথে নরেন্দ্র মোদীর ভিডিও সম্পাদনা করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভিডিওগুলো ৫ আগস্ট ২০২৪ এর অনেক আগে বাংলাদেশেই ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার পর থেকে তিনি এখনও কোনো গণমাধ্যমের সামনে আসেননি। এমতাবস্থায় তিনি যদি নরেন্দ্র মোদীর সামনে ভাষণ দিয়ে থাকতেন তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই তা নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমগুলো প্রচার করত।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল ভিডিওগুলোকে বিকৃত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।