সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ড অফ অনার নেয়ার সময় জাপানি রীতি অনুযায়ী “নড” (মাথা নিচু করে সম্মান প্রদর্শন) করেন নি, যা কিনা জাপানে শিষ্টাচারের লঙ্ঘন মনে করা হয়। তবে, অনুসন্ধানে এমন কোন ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের যে ভিডিওগুলো পাওয়া গেছে, সেখানে তাঁকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে “নড” করে সম্মান প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছে। মূলত সেই ভিডিও থেকে নির্দিষ্ট একটি মূহুর্তের একটি স্ক্রিনশট নিয়ে এই দাবিটি করা হচ্ছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এই দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত ২৫শে এপ্রিল ২০২৩ এ জাপানে যান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সফরের দ্বিতীয় দিনে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বাংলাদেশের অনেক সংবাদমাধ্যম সেটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিডিও ধারণ করে প্রকাশ করে। এ সময় বাংলাদেশ ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার গ্রহণ করার নানা নিয়ম পালন করতে দেখা যায়। তবে, ফেসবুকে শেয়ারকৃত ছবিটির সত্যতা যাচাই করার জন্য আমরা ইউটিউবে এর সাথে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান শুরু করি। অনুসন্ধানে প্রথমেই সময় টিভি এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, ৩৫ থেকে ৩৬ সেকেন্ড সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা একসঙ্গে “নড” করে অভিবাদন জানাচ্ছেন।
আবার, এখন টিভি এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত একই ধরনের আরো একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ১০ মিনিটের ভিডিওটির ৫ মিনিটের দিকে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাথা নত করার দৃশ্যটি।
এছাড়াও, ২৬শে এপ্রিল ২০২৩ এ প্রকাশিত চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে আরেকটি ভিডিও প্রতিবেদনের এক মিনিট ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময়কালে একই দৃশ্য দেখা গেছে। শুধুমাত্র গার্ড অব অনারই না, জাপানের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে পরিচয়পর্বের বেলায়ও প্রধানমন্ত্রীকে “নড” করতে দেখা গেছে।
মূলধারার সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া একটা নমুনা ছবি নিচে দেয়া হল:
মূলত এসব ভিডিও থেকে এমনভাবে স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র জাপানের প্রধানমন্ত্রীর মাথা নত দেখা যাচ্ছে। যে কারণে এরকম একটা মিথ্যা দাবির উদ্ভব ঘটেছে।
এসব ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট থেকে বোঝা যায়, সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছেন। তাদের অনেকেই ঘটনাটিকে সত্যি বলে মেনে নিচ্ছেন। নিম্নোক্ত স্ক্রিনশটগুলো থেকে বিষয়টি পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে।
কিন্তু, মূল ভিডিও প্রতিবেদনগুলো থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “নড” না করার দাবিটি ভিত্তিহীন এবং একটি মুহূর্তের ঘটনাকে সামগ্রিক ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে ভাইরাল পোস্টগুলোতে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টটির দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?