গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির অনেক নেতা-কর্মীই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ জুয়েল ভারতে গিয়ে বিধান মল্লিক নামে আধার কার্ড নিয়েছেন। আধার কার্ডে নিজের বাবার নাম উল্লেখ করেছেন ‘মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক’। দাবিটির সঙ্গে ভারতীয় একটি আধার কার্ডের ছবিও প্রচার করা হচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ জুয়েল ভারতে গিয়ে বিধান মল্লিক নামে আধার কার্ড নেওয়ার দাবিতে যে ছবিটি পাওয়া যাচ্ছে সেটি ভুয়া। তার নেওয়া কথিত আধার কার্ডের নম্বরটি যাচাইয়ে এমন কোনো কার্ডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
আধার কার্ডটির সত্যতা জানতে ফ্যাক্টওয়াচ টিম ভারতীয় নাগরিকদের আধার কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (ইউআইডিএই)’ ওয়েবসাইটের সহায়তা নেয়। এ কাজে ফ্যাক্টওয়াচ টিমকে সহায়তা করেন একজন ভারতীয় নাগরিক এবং সেখানকার একজন সাংবাদিক।
তারা ইউআইডিএ-র ওয়েবসাইটে শেখ জুয়েলের কথিত আধার কার্ডের নম্বরটি (৮৪৪২০৫৬৭৫৭২৬) ইনপুট দেন। এতে দেখা যায়, এটি একটি ইনভ্যালিড নম্বর। অর্থাৎ, এই নম্বরের বিপরীতে কোনো আধার কার্ড নেই। ফলে কথিত এই আধার কার্ডটির বিপরীতে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
একই সময়ে আরেকজন ভারতীয় নাগরিকের আধার কার্ডের নম্বরও ইনপুট দিয়ে দেখা হয়। এতে দেখা যায়, ওয়েবসাইটটি এই নম্বরটি গ্রহণপূর্বক ব্যবহারকারীকে পরবর্তী ধাপগুলো অনুসরণের অনুমতি দিচ্ছে।
এ ছাড়া শেখ জুয়েলের কথিত আধার কার্ডটির সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের ব্যবহৃত আধার কার্ডের অসঙ্গতিও নজরে এসেছে ফ্যাক্টওয়াচ টিমের।
আধার কার্ডটির সত্যতা যাচাইয়ে ফ্যাক্টওয়াচ টিম ভারতের উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক ব্যক্তির আধার কার্ডের ছবি সংগ্রহ করে। সংগৃহীত কার্ডগুলোর সামনের অংশে ব্যবহারকারীর বাবার নাম উল্লেখ করা হয়নি। অপরদিকে শেখ জুয়েলের কথিত কার্ডটিতে বাবার নাম ‘মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক’ উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ্য, ‘মুদিন্দ্রনাথ’ নামটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামের সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়।
প্রসঙ্গত, আধার কার্ড হচ্ছে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউআইডিএই) কর্তৃক ভারতীয় বাসিন্দাদের দেওয়া একটি অনন্য পরিচয় নম্বর। যা দেশটির বাসিন্দাদের পরিচয় এবং ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
এ ছাড়া শেখ জুয়েলের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র দাবিতে কথিত আধার কার্ডটির সঙ্গে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, তাতেও বেশ কিছু অসঙ্গতি নজরে এসেছে ফ্যাক্টওয়াচের। এর মধ্যে আছে বেশ কিছু বানান ভুল যেমন, “Governmment” (সঠিক বানান Government), “Peple’s” (সঠিক বানান People’s)।
আবার জাতীয় পরিচয়পত্রে যেখানে পরিচয়পত্রধারীর স্বাক্ষর থাকে, সেখানে শেখ জুয়েলের বাবার নামে স্বাক্ষর রয়েছে। এ থেকেও স্পষ্ট যে, এই পরিচয়পত্রটিও এডিট করা।
এসব অসঙ্গতির কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ‘বিধান মল্লিক’ নামে শেখ জুয়েলের পরিচয়ে ভাইরাল ভারতীয় আধার কার্ডটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করছে।
Claim: গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির অনেক নেতা-কর্মীই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ জুয়েল ভারতে গিয়ে বিধান মল্লিক নামে আধার কার্ড নিয়েছেন। আধার কার্ডে নিজের বাবার নাম উল্লেখ করেছেন ‘মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক’। দাবিটির সঙ্গে ভারতীয় একটি আধার কার্ডের ছবিও প্রচার করা হচ্ছে।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh