ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শত বছর পুরোনো শিবলিঙ্গ পাওয়ার ভুয়া দাবি

73
ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শত বছর পুরোনো শিবলিঙ্গ পাওয়ার ভুয়া দাবি
ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শত বছর পুরোনো শিবলিঙ্গ পাওয়ার ভুয়া দাবি

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪- এ ভারতে চলে যান। এরপরে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ ভারত থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেন, যার প্রতিবাদে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা একই দিন রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একটি শিবলিঙ্গের ছবি শেয়ার করা হয়। দাবি করা বাড়ি ভাঙার ফলে এর নিচে প্রায় ৩'শ বছর আগের এই শিবলিঙ্গটি পাওয়া গেছে৷ কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের তিরুপতির কাছে অবস্থিত গুড়িমাল্লামের পরশুরামেশ্বর মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচীন শিবলিঙ্গের ছবি এটি। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে এই শিবলিঙ্গ পাওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল পোস্টগুলো মিথ্যা। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া শিবলিঙ্গের ছবিটি প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ব্যাক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন “শেখ মুজিব ওরফে দেবদাস চক্রবর্তীর বাড়ির নিচে প্রায় ৩’শ বছর আগের শিবলি’ঙ্গ পাওয়া গেছে৷ অতএব, ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষের দাবি ৩২ নম্বরে শিব মন্দির বানানো হোক৷ ” এই পোস্ট ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকেই একে সত্য ঘটনা মনে করে ফেসবুকে শেয়ার করে। ইলিয়াসের পোস্টের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে যার শিরোনামে উল্লেখ করা হয় “ধানমন্ডি ৩২ এর শিবলিঙ্গ এখন দেশজুড়ে আলোচনায়।” এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, শিবলঙ্গটি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে পাওয়া গেছে। যদিও, বিস্তারিত অংশে  ইলিয়াস হোসেনের ফেসবুক পোস্টের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়। সংবাদমাধ্যমগুলো হচ্ছেঃ দৈনিক জনকন্ঠ, জুম বাংলা এবং বার্তা বাজার

পরবর্তীতে আলোচিত ছবিটি যাচাই করার জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Jothishi নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১৪ অক্টোবর ২০২৪-এ আপলোড করা ভাইরাল ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয় শিবলিঙ্গটি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রাম গুড়িমাল্লামে অবস্থিত ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রাচীন শ্রী পরশুরামেশ্বর মন্দিরে স্থাপিত। মন্দিরটি ভারতের প্রাচীনতম শিব মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়।

এই সূত্র অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে বিবিসি নিউজ তেলেগুর ওয়েবসাইটে ১১ মার্চ ২০২১ এ প্রকাশিত এই শিবমন্দির সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও আলোচিত শিবলিঙ্গটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, শিবলিঙ্গটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের তিরুপতির কাছে অবস্থিত গুড়িমাল্লামের পরশুরামেশ্বর মন্দিরের। এর অনন্যতা সম্পর্কে প্রাচীন শিলালিপিতে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ অনুমান করে, এই মন্দিরটি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ এবং লেখক ইমানি শিবানাগি রেড্ডির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি উল্লেখ করে যে, এই মূর্তিতে মৌর্য আমলের শৈলী দৃশ্যমান। 

তাছাড়া গুগল ম্যাপের স্ট্রিট ভিউ এর সাহায্যে নিশ্চিত হওয়া যায় যে পরশুরামেশ্বর মন্দিরটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের গুড়িমাল্লামে অবস্থিত। 

অন্যদিকে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা শুরু হয় গত ৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু আলোচিত শিবলিঙ্গের ছবিটি কমপক্ষে ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যায়। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন। তাছাড়া, ভাংচুরের পড়ে উপস্থিত জনতা বাড়ির বিভিন্ন সামগ্রী পেয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল যার উল্লেখ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু, ‘বাড়ির নিচ থেকে ৩০০ বছর পুরোনো  শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে’ এই দাবির সমর্থনে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

Claim:
ফেসবুকে একটি শিবলিঙ্গের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয় ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙার ফলে এর নিচে প্রায় ৩'শ বছর আগের এই শিবলিঙ্গটি পাওয়া গেছে৷

Claimed By:
Facebook users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh