সম্প্রতি “কুয়েতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নাসসি আল খিরকি মারা গিয়েছেন” দাবিতে ছবিসহ কিছু ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ছবিতে থাকা ব্যাক্তির নাম নাসসি আল খিরকি নয় এবং তিনি কুয়েতের নাগরিক নন। তার নাম শেরন সুকেদো (Sheron Sukhedo), ৩৩ বছর বয়সে তিনি খুন হন। শেরন মূলত ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর নাগরিক।
এসব পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে,” কি করবেন টাকা দিয়ে দেখেন তো
ধন সম্পদ কোন কাজে লাগে কুয়েতের সব চেয়ে ধনী ব্যক্তি নাসসি আল খিরকি মারা গিয়েছেন। স্বর্নের বাড়ি, স্বর্নের গাড়ি, স্বর্নের বিমান,, সহ তিনি
ধন সম্পদের পাহাড় রেখে গেছেন
সাথে কিছু নিয়ে যেতে পারেন নাই ?
কিন্তু তাঁর অর্জিত পুন্য ছাড়া কিছুই নিতে পারেন না।
তাই টাকা বা ধন সম্পদের পেছনে না দৌড়ে
যদি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের নির্দেশনুযায়ী
জীবন পরিচালনা করি এবং সৎপথে নিজেকে নিয়োজিত করি, তবে সেটাই হবে নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমানের কাজ।“
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভাইরাল এসব পোস্টে থাকা ছবির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেশ কিছু তথ্য যাচাই প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪ নভেম্বর ২০১৯ এ “Alt News” প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় লোকটির নাম শেরন সুকেদো। পরবর্তীতে এই নাম দিয়ে অনুসন্ধান করা হলে, ৪ এপ্রিল ২০১৮ এ প্রকাশিত ডেইলি মেইলের আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
জানা যায়, ৩৩ বছর বয়সী শেরন সুকেদো তার স্ত্রীর অভিভাবকের বাড়িতে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। মৃত্যুর পর তাকে একটি কফিনে ১০০,০০০ ডলার মূল্যমানের অলংকারসহ আরোও বিভিন্ন বিলাসবহুল জিনিস দিয়ে শায়িত করা হয়। তিনি ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর নাগরিক ছিলেন।
ডেইলি এক্সপ্রেস নামে ত্রিনিদাদের একটি সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, তার খুনীদের গ্রেপ্তার করতে একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো।
অর্থাৎ, বিষয়টি নিশ্চিত যে ভাইরাল ছবির লোকটি কুয়েতের নাগরিক নয় এবং তার নাম নাসসি আল খিরকি নয়।
এছাড়া “নাসসি আল খিরকি” নামে কোনো কুয়েতি ধনী লোকের মৃত্যুর কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী কাতারের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম তারিক সালিম আলারিয়ান।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে নাসের আল খারাপি নামে কুয়েতের একজন ধনকুবের হার্ট এটাকে মারা যান। এরপর ২০১৯ এ এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায় যেখানে নাসের আল খারাপির নামটি পরিবর্তন করে নাসসি আল খারকি নামটি ব্যবহার করা হয় এবং এর সাথে ত্রিনিদাদের এই শেরনের ছবি ব্যবহার করা হয়। মূলত এরপর থেকেই এই গুজবটি বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে।
এ নিয়ে পুরনো দুইটি ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট পড়ুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে ভাইরাল ছবিতে থাকা লোকটির নাম শেরন সুকেদো এবং তিনি কুয়েতের নয় বরং ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর নাগরিক। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এমন ক্যাপশনসহ ফেসবুক পোস্টগুলোকে মিথ্যা চিহ্নিত করা হচ্ছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?