ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ফিরছে- এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। এমন বার্তাযুক্ত দৈনিক নয়া দিগন্তের একটি ফটোকার্ডও অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। তবে দৈনিক নয়া দিগন্ত জানিয়েছে যে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি তাদের নয়। এছাড়া, ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের দৃশ্যমান কোনো উপস্থিতির কোনো খবর এখনো সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছেনা।
এসব পোস্টে বলা হয় – ইবিতে (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে) ফিরছে শিবির। মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে বোরখা; হারাম প্রেম নিষিদ্ধ।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ফটোকার্ডটা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এখানে প্রথম বাক্যে অস্বাভাবিকভাবে তৃতীয় বন্ধনী ব্যবহার করা হয়েছে।
দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত অন্যান্য ফটোকার্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সেখানে কোনো তৃতীয় বন্ধনীর ব্যবহার নেই। এবং তাদের ব্যবহৃত ফন্টের সাথেও এই কার্ডে ব্যবহৃত ফন্টের মিল নেই।
এছাড়া ,৯ই আগস্ট রাত ৮টা ২৩ মিনিটে নয়া দিগন্তের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ করা অপর এক পোস্টে জানানো হয়েছে ‘ইবিতে ফিরছে শিবির’ এমন কোনো খবর নয়া দিগন্ত প্রচার করেনি।
গত ৭ই আগস্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র-জনতা ৫ টি ম্যুরাল ভেঙে ফেলে, যা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে নির্মিত হয়েছিল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথাও বলেছিলেন। তবে শিবিরের কোনো নেতাকর্মীর উপস্থিতির কথা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছেনা।
এর আগে গত ৬ই আগস্ট তারিখে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে তালা ভেঙে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করলো ছাত্রদল-শিবির শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর পক্ষ থেকে ই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দাবি করা হয়, ছাত্রশিবিরের দীর্ঘ ৪৯ বছরের পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-সহ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্বমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল এমন কোনো নজির নেই। অথচ শুধুমাত্র প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ছাত্রশিবিরকে হেয় করার জন্য কতিপয় মিডিয়া নানা সময় অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।
ফটোকার্ডে অপর যে দু’টি বাক্য ব্যবহৃত হয়েছিল (মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে বোরখা,হারাম প্রেম নিষিদ্ধ) সে বাক্যগুলি সংবাদমাধ্যমের সাথে পুরোপুরি মানানসই নয়, বরং কারো ফেসবুক পোস্টের অংশবিশেষ হিসেবে বেশি বিশ্বাসযোগ্য। এছাড়া বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সহ প্রধান কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের আইন-শৃংখলা বিষয়ে নতুন কোনো আদেশ জারি করা সম্ভব নয়।
এছাড়া, ফটকার্দে যে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নয়, বরং গত ৩রা মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের একটি মিছিলের ছবি এটি।
সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতীতে নিষ্ক্রিয় থাকা রাজনৈতিক সংগঠনের পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তবে যেহেতু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা ছাত্রশিবিরের পুনরায় সক্রিয় হওয়ার দৃশ্যমান কোনো আলামত এখনো কোনো সংবাদমাধ্যম থেকে নিশ্চিত জানা যাচ্ছেনা , এবং যে সংবাদমাধ্যম (নয়া দিগন্ত) কে উদ্ধৃত করে শিবিরের ফিরে আসার দাবি করা হচ্ছে তারা নিজেরাই এটা অস্বীকার করছে, তাই এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।