সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি সাপ এবং একাধিক সাপের বাচ্চার ছবি সংবলিত একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে সাপগুলো রাসেল’স ভাইপার। “কালবেলা” নামক একটি সংবাদমাধ্যমও উক্ত ছবিটি ব্যবহার করে একইরকম দাবি করেছে। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, আলোচিত ছবিতে দৃশ্যমান সাপ এবং সাপের বাচ্চাগুলো রাসেল’স ভাইপার নয়৷ বরং, সেগুলো মৃদু বিষধর সাইবোল্ডের পাইন্না (Siebold’s Water Snake) সাপ। ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত দুটো সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এবং কালবেলা’র প্রকাশিত ছবিটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
অনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত যে সাপ এবং সাপের বাচ্চার ছবিগুলোকে রাসেল’স ভাইপার বলে প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলো আসলে মৃদু বিষধর সাইবোল্ডের পাইন্না (Siebold’s Water Snake) সাপ। জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক ফিলিপ ফ্রানৎস ফন সাইবোল্ডের নাম অনুসারে সাপটির নামকরণ করা হয়। এই সাপের গায়ের রঙ গাঢ় জলপাই সবুজ কিংবা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে এবং রাসেল’স ভাইপারের তুলনায় এদের গায়ের ত্বক চকচকে হয়। রাসেল’স ভাইপারের গায়ের ত্বক শুষ্ক হয়। সাইবোল্ডের পাইন্না সাপের গায়ে, বিশেষ করে পিঠের দুইপাশে হালকা বর্ণের চাকতির মতো দাগ পাওয়া যায়। রাসেল’স ভাইপারের শরীরের চাকতির মতো দাগগুলো খুব উজ্জ্বল হয়। এই চাকতির মতো দাগগুলো তাদের পুরো শরীর জুড়ে অনিয়মিতভাবে ছড়িয়ে থাকে। এদের মাথা ঘাড়ের তুলনায় কিছুটা চওড়া হয়। রাসেল’স ভাইপারের মতোই সাইবোল্ডের পাইন্না সাপ ডিম না পেড়ে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।
অন্যদিকে, রাসেল’স ভাইপারের মাথা ত্রিকোণাকৃতি বা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘V’ এর মতো দেখতে হয়। এদের মাথা ঘাড় থেকেও চওড়া হয়, এদের নাসারন্ধ্র ছোট এবং চোখের মণি খাঁড়া হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে চেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফ্যাকাশে কমলা বাদামী রঙের পিঠের উপর লালচে বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত, যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীরে এই চাকতির মতো কালো রঙের সীমানাযুক্ত বৃ্ত্তগুলো কিছুটা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় বাংলায় এই সাপকে বলা হয় চন্দ্রবোড়া। রাসেল’স ভাইপার সাপ তার এই অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ত্বকের গঠনের কারণে এবং এর চামড়া দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি হয় বলে শিকারীর শিকার হয়। বিপদের সম্মুখীন হলে রাসেল’স ভাইপার কুন্ডলী পাকিয়ে ‘ফোঁস ফোঁস’ শব্দ করে শত্রুকে লক্ষ্য করে সতর্কবার্তা পাঠাতে থাকে এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাসের ফলে এর শরীর স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বেশি ফেঁপে উঠে। রাসেল’স ভাইপার ডিম না পেড়ে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।
অতএব, উপরে দুটো আলাদা সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিতে যে সাপ এবং সাপের বাচ্চাগুলোকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে সেগুলো আসলে মৃদু বিষধর সাইবোল্ডের পাইন্না সাপ।
এর আগেও ভিন্ন সাপকে রাসেল’স ভাইপার দাবি করে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
সাইবোল্ডের পাইন্না সাপকে রাসেল’স ভাইপার দাবি করে কালবেলা’র প্রকাশিত সংবাদ দেখবেন এখানে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।