“ছেলেদের সপ্তাহে একদিন স্কার্ট পরার নির্দেশ দিল স্কুল কর্তৃপক্ষ”- দাবিটি পুরোনো ও মিথ্যা

131
“ছেলেদের সপ্তাহে একদিন স্কার্ট পরার নির্দেশ দিল স্কুল কর্তৃপক্ষ”- দাবিটি পুরোনো ও মিথ্যা
“ছেলেদের সপ্তাহে একদিন স্কার্ট পরার নির্দেশ দিল স্কুল কর্তৃপক্ষ”- দাবিটি পুরোনো ও মিথ্যা

Published on: [post_published]

সম্প্রতি “ছেলেদের সপ্তাহে একদিন স্কার্ট পরার নির্দেশ দিল স্কুল কর্তৃপক্ষ” এমন শিরোনামে স্কার্টপরিহিত কয়েকজন ছেলের ছবিসহ একটি খবর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। দি গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, খবরে ব্যবহৃত ছবিটি কমপক্ষে ৪ বছর পুরনো এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়ের। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।

ভাইরাল হওয়া খবরটি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

খবরে দাবি করা হয়,”হ্যাঁ স্কার্ট কমাবে লিঙ্গ সমতা। শুনে অবাক লাগলেও লিঙ্গ সমতা ফেরাতে এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের আপিনঘ্যাম স্কুল কর্তৃপক্ষ।” সেখানে ক্যাসলভিউ নামে আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এমন স্কার্ট পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়। মূল খবরটির সাথে স্কার্টপরিহিত কয়েকজন ছেলের একটি ছবি ব্যবহার করা হয়। যদিও সেখানে শুধুমাত্র “সংগৃহীত” ছাড়া আর কোনো বিবরণ দেওয়া হয়নি ছবিটির ব্যপারে। এছাড়াও এমন আরোও কয়েকটি ওয়েবপোর্টালের বরাত দিয়ে খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এমন কয়েকটি খবর পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল খবরটিতে ব্যবহৃত ছবিটি দিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দি গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২৭ জুন ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত “Exeter school’s uniform resolve melts after boys’ skirt protest” শিরোনামের এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে বর্তমানে ভাইরাল খবরের ছবিটির শতভাগ মিল পাওয়া যায়। কমপক্ষে ৪ বছর পুরনো ওই ছবিটির বিবরণে বলা হয়, “এক্সেটারের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাওয়ার পরেও শর্ট প্যান্ট পড়ার অনুমতি না দেওয়ায় সেখানকার আইএসসিএ একাডেমির ছেলেরা স্কার্ট পড়ে প্রতিবাদ জানায়।”

একই বিষয় নিয়ে “Teenage boys wear skirts to school to protest against ‘no shorts’ policy” শিরোনামে দি গার্ডিয়ানের অন্য একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের জুন মাসে তীব্র গরমের কারণে আইএসসিএ একাডেমির ছাত্ররা শর্ট প্যান্ট পড়ে একাডেমিতে আসার কথা শিক্ষককে জানায়। কিন্তু তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে ছাত্ররা মেয়েদের স্কার্ট পড়ার কথা মনে করিয়ে দিলে শিক্ষক মজার ছলেই বলেন যে, ছাত্ররাও চাইলে স্কার্ট পড়ে আসতে পারে। আর তাই এর পরদিন কয়েকজন ছাত্র স্কার্ট পড়েই একাডেমিতে আসে।

অর্থাৎ, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি মূলত আজ থেকে কমপক্ষে ৪ বছর আগের এবং সেখানে লিঙ্গ সমতা ফেরানোর জন্য স্কার্ট পড়া হয়নি বরং “No Shorts” নামে ওই একাডেমির একটি পলিসির বিরোধিতা করে পড়া। আবার এটি ভাইরাল হওয়া পোস্টে বর্ণিত কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ছবিও নয়।

অন্যদিকে খবরের শিরোনামে দাবি করা হয়, ছেলেদের সপ্তাহে একদিন স্কার্ট পড়তে নির্দেশ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিস্তারিত অংশে স্কুল হিসেবে, যুক্তরাজ্যের আপিংহ্যাম স্কুল এবং ক্যসলভিউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে এসব কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করা হলে “Primary school boys and girls wear skirts to promote gender equality” শিরোনামে “standard.co.uk” এর ০৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয় যে “Wear a Skirt to School Day” নামক একটি মুভমেন্টের অংশ হিসেবেই শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকেরা এই পদক্ষেপ নেন। সেখানে অংশগ্রহণকারী ইথান প্রোভান (Ethan Provan) নামের একজন শিক্ষার্থীর মা নিকোলা টেইলর (Nicola Taylor) বলেন,”এটি ঐচ্ছিক ছিলো, আপনাকে অংশগ্রহণ করতেই হবে এমন নয়।”

অর্থাৎ, শিরোনামে যেভাবে সপ্তাহে একদিন স্কার্ট পড়ার নির্দেশের কথা বলা হয়েছে সেরকমটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ঐচ্ছিকভাবে “Wear a skirt to school day” নামক একটি মুভমেন্টের অংশ হিসেবে একদিন স্কার্ট পরার বিষয়টি উদযাপন করেছে মাত্র।

অন্যদিকে আপিংহ্যাম স্কুলে সম্প্রতি এমন কিছু হয়েছে কি না তা জানতে পারা যায়নি। তবে “Top private school to let boys wear skirts” শিরোনামে “express.co.uk” এর ০৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্কুলটির প্রধানশিক্ষক রিচার্ড মেলোনি (Richard Maloney) বলেছিলেন, “আমি আশা করবো যেনো যেকোনো শিক্ষার্থী আমার কাছে আসতে পারে এবং বলতে পারে,’ এটাই আমরা, আমরা এভাবেই নিজেদের প্রকাশ করতে চাই, আমরা এমন পোশাক পড়তে চাই’ এবং আমরা হয়তো তার অনুমতিও দিবো “।

উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে স্পেনের বিলবাও এর একটি স্কুলে মিকেল গোমেজ (Mikel Gomez) নামক একজন ছাত্রকে স্কুলে স্কার্ট পড়ে আসার কারণে বহিষ্কার করা হয়। এর প্রতিবাদে স্পেনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা একদিন স্কার্ট পড়ে স্কুলে আসে। মূলত এর পর থেকেই অনেক জায়গায় ০৪ নভেম্বর তারিখটিকে “wear a skirt to school day” হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

উপরোল্লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে ভাইরাল হওয়া পোস্টের কয়েকটি অসংগতি চিহ্নিত করা যায়। ১) ভাইরাল খবরে ব্যবহৃত ছবিটি ভিন্ন একটি মুভমেন্টের এবং ছবিটি কমপক্ষে ৪ বছর পুরনো। ২) ‘সপ্তাহে একদিন স্কার্ট পড়ার নির্দেশ’ বিষয়টি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি, মূলত “Wear a skirt to school day” নামক একটি মুভমেন্টের অংশ হিসেবে কিছু প্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্র ও শিক্ষক একদিনের জন্য স্কার্ট পড়ার মাধ্যমে মুভমেন্টটির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে মাত্র। এই অসংগতিগুলো বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ এমন খবরটিকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.