সাপের জীবাশ্ম নয়, এগুলো আসলে পাথরের ছবি

13
সাপের জীবাশ্ম নয়, এগুলো আসলে পাথরের ছবি সাপের জীবাশ্ম নয়, এগুলো আসলে পাথরের ছবি

Published on: [post_published]

“পাওয়া গেল সবচেয়ে বড় সাপের জীবাশ্ম, হতবাক বিজ্ঞানীরা” শিরোনামে কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের বুয়েং খং লং জেলায় অবস্থিত ফু লাংকা ন্যাশনাল পার্কের “নাকা গুহা” এবং লাওসের উদমসাই অঞ্চলে অবস্থিত ভিন্ন ভিন্ন পাথরখন্ডের ছবি সম্পাদনার মাধ্যমে একত্রিত করে এমন দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে। অর্থাৎ ছবিগুলো পাথরখন্ডের কোনো সাপের ফসিলের বা জীবাশ্মের নয়। উল্লেখ্য,  ‘Natural History Museum’ এর তথ্যমতে বর্তমান সময়ে জীবিত সাপের প্রজাতিগুলোর মধ্যে দৈহিক উচ্চতার দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচাইতে বড় আকৃতির সাপ হচ্ছে Reticulated Python. তবে প্রাগৈতিহাসিক কালের প্রজাতি (বর্তমানে বিলুপ্ত) থেকে হিসেব করা হলে এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় সাপের জীবাশ্মটির নাম Titanoboa cerrejonensis বা Titanic Boa. 

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: 

ভাইরাল ছবিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চের সাহায্য নেয়া হয়। সেখানে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, সাপের আঁশের মতো দেখতে পাথরখন্ডগুলো মূলত থাইল্যান্ডের বুয়েং কান প্রদেশের, বুয়েং লং জেলার ‘ফু লাংকা জাতীয় উদ্যান’-এ অবস্থিত। থাইল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় ট্যুরিজম সাইট Thailand Tourism Directory ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আর্টিকেল থেকে তথ্যটির সত্যতা মিলেছে। ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে, সাপের দেহের মতো আকৃতির একটি পাথর এটি। এই পাথরের উপরের অংশের আবরণও অনেকটা সাপের আঁশের মতো দেখতে। ভূতত্ত্বের পরিভাষায়, এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের শিলা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে গরম-ঠাণ্ডা তাপমাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে, শারীরিক প্রক্রিয়াগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। শিলাকে ঘিরে থাকা পৃষ্ঠের ফাটলগুলিকে সূর্যের ফাটল বলে। অর্থাৎ ছবিটি কোনো সাপের জীবাশ্মের নয়।

 

সাপের মাথার আকৃতির দেখতে পাথরটি থাইল্যান্ডের রাচাবুরি প্রদেশ থেকে দশ কিলোমিটার দূরে লাওসের  একটি মরু অঞ্চলে অবস্থিত, অর্থাৎ যা কিনা থাইল্যান্ডের (পার্শ্ববর্তী দেশ) । বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েসাইট Scienceinfo.net থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপের জীবাশ্মের বিষয়ে তথ্য জানতে অনুসন্ধান করা হয়। সেখানে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় সাপের জীবাশ্মটি 2009 সালে উত্তর কলম্বিয়ার একদল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন। তারা জীবাশ্মটি Titanoboa cerrejonensis, থেকে খুঁজে পেয়েছিলেন সংক্ষিপ্ত আকারে যা Titanic Boa নামে পরিচিত। জীবাশ্মটির আকারের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন সবচেয়ে বড় সাপটি ছিল ৪৩ ফুট লম্বা এবং ওজন ছিল ২,৫০০ পাউন্ড। এটিকে এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে বড় সাপের জীবাশ্ম হিসেবে ধরা হয়। AZ ANIMALS নামের  প্রাণী বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে দেখুন এখানে

 

তাছাড়া ‘Natural History Museum’ থেকে আরও জানা যায়, বর্তমান সময়ে ওজনের দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী সাপ সবুজ অ্যানাকন্ডা। এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচাইতে ভারী সাপটির ওজন ছিলো ২২৭ কেজি এবং দীর্ঘ  ৮.৪৩ মিটার লম্বা প্রস্থ ১.১১ মিটার চওড়া।

সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন  স্থানের পাথরের ছবিকে একত্রে পোস্ট করে সবচেয়ে বড় সাপের জীবাশ্ম বলা হয়েছে। যে কারণে এমন তথ্যগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

সংশোধনীঃ ভাইরাল ছবিটি থাইল্যান্ড এবং লাওসের  (ভিন্ন  দুইটি দেশ) থেকে নেয়া হয়েছে, পূর্বে এই বিষয়টি উল্লেখ ছিলো না। 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.