মহাশূন্যে হাঁটার বিখ্যাত ছবিকে বিকৃত করে ভাইরাল

8
মহাশূন্যে হাঁটার বিখ্যাত ছবিকে বিকৃত করে ভাইরাল মহাশূন্যে হাঁটার বিখ্যাত ছবিকে বিকৃত করে ভাইরাল

Published on: [post_published]

সম্প্রতি মহাকাশে ভাসমান একজন মহাকাশচারীর একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে তাকে দৃশ্যমান কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই উন্মুক্তভাবে মহাকাশে ভাসতে দেখা যাচ্ছে এবং তার নিচে খুবই পরিষ্কারভাবে পৃথিবীর পর্বতমালা দেখা যাচ্ছে। উক্ত ছবি এবং এসব পোস্টে থাকা ক্যাপশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি মহাশূন্যে ১৯৮৪ সালে হেঁটে বেড়ানোর বিখ্যাত একটি ছবিকে বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে। মূল ছবিতে থাকা পৃথিবীপৃষ্ঠের জায়গাটি পরিবর্তন করে সেখানে স্বচ্ছ পর্বতমালার একটি ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে। বিখ্যাত এমন একটি ছবিকে বিকৃত করে প্রচার করায় ফ্যাক্টওয়াচ একে “বিকৃত” সাব্যস্ত করছে।

 

এই ছবিসহ কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ভাইরাল এসব ছবির সাথে দাবি করা হচ্ছে, “মহাকাশচারী ম্যাক ক্যান্ডলেস। মহাকাশ যানের নিরাপত্তা ছাড়াই ভাসছেন শুন্যে। তার ম্যানুভ্যারিং ইউনিট তাকে বেচে থাকতে সাহায্য করেছে। তিনিই ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি যিনি এমনটি করেছেন“। এই দাবিটি সঠিক। কিন্তু ছবিটি বিকৃত।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

 

ভাইরাল ছবির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, অ্যাামাজনের একটি ফটোগ্যালারীতে প্রায় এমনই একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, এটি দ্বিতীয় ব্রুস ম্যাকক্যান্ডলসের এর উন্মুক্তভাবে মহাকাশে ভাসার একটি ছবি।

এখানে পাওয়া প্রাসঙ্গিক এসব কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে আবারো অনুসন্ধান করা হলে, ০৭ নভেম্বর, ২০১১ এ নাসা (ন্যাশনাল এরোনটিক্স এবং স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্রকাশিত একটি ছবি পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, ছবিটি ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তোলা হয়েছে এবং ব্রুস ম্যাকক্যান্ডলেস নামে একজন মহাকাশচারীর ছবি এটি।

 

ভাইরাল ছবির সাথে এই ছবিটি তুলনা করলে দেখা যায়, ছবি দুইটি প্রায় এক শুধুমাত্র ভাইরাল ছবিটিতে নিচে পৃথিবীর যে অংশটি দেখা যাচ্ছে তা মূল ছবিতে নেই।

ভাইরাল ছবি

নাসা থেকে পাওয়া মূল ছবি

পরবর্তীতে, পর্বতমালাসহ ছবিটি অনুসন্ধান করা হলে, এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে ইউএসএ টুডের একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের রেফারেন্স খুঁজে পাওয়া যায়। জানা যায়, কমপক্ষে ১১ বছর আগে এই ছবিটি ফ্লিকারে প্রকাশিত হয়। সেখানে “Tianxiao Zhang” নামে একটি একাউন্ট থেকে ছবিটি আপলোড করা হয়। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, উক্ত ছবিতে ব্যবহৃত পর্বতের জায়গাটি তার নিজের তোলা এবং মহাকাশচারীর এই ছবিটি ব্রুস ম্যাকক্যান্ডলসের।

 

ইউএসএ টুডে’কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই একাউন্টের ব্যবহারকারী “Tianxiao Zhang” জানায়, ভাইরাল ছবিতে ব্যবহৃত পৃথিবীর জায়গাটুকু টরন্টো থেকে বেইজিং এ যাওয়ার সময় বিমান থেকে তুলেছিলেন। তিনি বলেন, ১১ মে, ২০০৯ এ সে ছবিটি তুলে এবং সম্ভবত ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ এ পোস্ট করেন। তিনি আরো বলেন,”আমি ভেবেছিলাম ফ্লিকারে দেয়া ছবি বিবরণী ব্যবহারকারীদের বুঝার জন্য যথেষ্ট হবে কিন্তু দেখা যাচ্ছে ফেসবুকের জন্য যথেষ্ট হয়নি। আমি কখনোই ভাবিনি ছবিটিকে কেউ বাস্তব ভাবতে পারে।”

 

উল্লেখ্য, ব্রুস ম্যাকক্যান্ডলেস প্রথম ব্যক্তি যিনি মহাকাশে প্রথম সম্পূর্ণ উন্মুক্তভাবে দৃশ্যমান কোনো নিরাপত্তা ছাড়া স্পেসওয়াক করেন। উপরোক্ত ছবিটি সেই সময়েই তোলা। এই স্পেসওয়াকের একটি ভিডিও দেখুন এখানে।

 

অর্থ্যাৎ, পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে নাসা প্রকাশিত মূল ছবিতে নিচের পৃথিবীর অংশটি ছিলো না। ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সেটি তৈরি করা হয়েছে। সেই ফটোগ্রাফারের সাক্ষাৎকার থেকে যা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়।

 

তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায়, ভাইরাল এই ছবিটিকে বিকৃত চিহ্নিত করা হলো।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.