সম্প্রতি থ্রেডসে একটি সাপের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি রাসেল’স ভাইপার। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, উক্ত সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয়। বরং, বিষধর খৈয়া গোখরা (Spectacled Cobra or Indian Cobra) সাপ। রাসেল’স ভাইপার এবং খৈয়া গোখরা সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ থ্রেডসে শেয়ারকৃত পোস্টটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
অনুসন্ধান:
থ্রেডসে শেয়ারকৃত যে সাপের ছবিটিকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি আসলে বিষধর খৈয়া গোখরা (Spectacled Cobra) সাপ। এই সাপ হুমকির সম্মুখীন হলে ফণা তুলে ‘হিস হিস’ শব্দ করে শত্রুকে সতর্কবার্তা পাঠায়। এদের ফণায় একজোড়া চশমার মতো দাগ থাকে বিধায় ইংরেজিতে এদেরকে ‘Spectacled Cobra’ বলা হয়। বাংলায় এই সাপকে ‘খৈয়া গোখরা’ বলা হয়, কারণ এদের ফণার কালো দাগ দেখতে অনেকটা গরুর ক্ষুরের মতো। মূলত খৈয়া গোখরার ফণা এবং ফণার পেছনে দৃশ্যমান কালো দাগ দেখে এই সাপকে চেনা যায়। এদের মাথা এবং ঘাড় সমান হয়। অঞ্চলভেদে এই সাপের গায়ের রঙ বিভিন্ন বর্ণের হয়। এরা দৈর্ঘ্যে তিন থেকে পাঁচ ফুট লম্বা হয়। খৈয়া গোখরার বিষ হচ্ছে নিউরোটক্সিক, যা রক্তের সঙ্গে মিশে পেশিকে অসাড় করে দেয় এবং শ্বাসযন্ত্র এবং হৃদযন্ত্রের কাজকে ব্যাহত করে। বাংলাদেশে প্রতিবছর যে কয়েকটি বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয় তাদের মধ্যে খৈয়া গোখরা অন্যতম৷ খৈয়া গোখরা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়।
অন্যদিকে, রাসেল’স ভাইপারের মাথা ত্রিকোণাকৃতি বা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘V’ এর মতো দেখতে, এদের মাথা ঘাড় থেকেও চওড়া হয়, এদের নাসারন্ধ্র ছোট এবং চোখের মণি খাঁড়া হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে চেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফ্যাকাশে কমলা বাদামী রঙের পিঠের উপর লালচে বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত, যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীরে এই চাকতির মতো কালো রঙের সীমানাযুক্ত বৃ্ত্তগুলো কিছুটা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় বাংলায় এই সাপকে বলা হয় চন্দ্রবোড়া। রাসেল’স ভাইপার সাপ তার এই অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ত্বকের গঠনের কারণে এবং এর চামড়া দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি হয় বলে এদের শিকার করা হয়। বিপদের সম্মুখীন হলে রাসেল’স ভাইপার কুন্ডলী পাকিয়ে ‘ফোঁস ফোঁস’ শব্দ করে শত্রুকে লক্ষ্য করে সতর্কবার্তা পাঠাতে থাকে এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাসের ফলে এর শরীর স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বেশি ফেঁপে উঠে। রাসেল’স ভাইপার ডিম না পেড়ে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।
অতএব, উপরে দুটো সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে বুঝা যাচ্ছে যে, থ্রেডসে যে সাপটিকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি আসলে বিষধর খৈয়া গোখরা সাপ।
এর আগেও বিভিন্ন সাপকে রাসেল’স ভাইপার হিসেবে দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। উক্ত গুজবগুলো নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ থ্রেডসে শেয়ারকৃত পোস্টটিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।