রাস্তায় শত শত বানরের ভিডিওটি অযোধ্যা রাম মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত নয়

44
রাস্তায় শত শত বানরের ভিডিওটি অযোধ্যা রাম মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত নয়
রাস্তায় শত শত বানরের ভিডিওটি অযোধ্যা রাম মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত নয়

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছেঃ ভাইরাল ভিডিওটি  শ্রী রামচন্দ্রের মূর্তি অযোধ্যায় পৌছানোর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তার বিপুল সংখ্যক বানরসেনার অযোধ্যায় যাওয়ার সময়কার।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। বাস্তবে এই ভিডিওটি থাইল্যান্ডের লপবুরি শহরের, যার সাথে অযোধ্যার রাম মন্দিরের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত ২০২০ সালের ১১ মার্চ থাইল্যান্ডের লপবুরি শহরে সান ফ্রা কান (San Phra Kan) মন্দিরের সামনে বানরের দুটো দল খাবারের জন্য মারপিটে জড়িয়ে পড়েছিল। শত শত বানর সেখানকার রাস্তা আটকে মারপিট করছিল। ভাইরাল  ভিডিওটি মূলত সেই সময়কার।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে গার্ডিয়ান নিউজের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ আপলোড করা একটি ভিডিও প্রতিবেদনের ২৮ সেকেন্ড থেকে শেষ অংশটুকুর সাথে ভাইরাল ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওর নিচে লিখিত ইংরেজি বিবরণ থেকে জানা যায়, ব্যাংককের উত্তর-পূর্ব অংশের একটি শহর লোপবুরির একটি রাস্তায় দইয়ের পাত্র নিয়ে বানরদের মারপিট শুরু হয়েছিল। শহরটি বানরের জন্য বিখ্যাত। এই শহরে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ার সেখানকার বানরদের খাবার সরবরাহ কমে গিয়েছিল।

 

পরবর্তিতে এই সূত্র অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ডেইলি মেইলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১১ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান উল্লেখ করা হয় যে মধ্য থাইল্যান্ডের লোপবুরি শহরের বানরগুলো সাধারণত পর্যটকদের দেয়া খাবার খেয়েই জীবনযাপন করত। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সেখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল, ফলে বানরদের খাবারের সংস্থানও হ্রাস পেয়েছিল। এছাড়াও এই প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওটির দীর্ঘ সংস্করণের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে শত শত বানরকে রাস্তা পার হতে এবং পরে হাঁতে একটি কলা ধরে থাকা একটি বানরকে আক্রমণ করতে দেখা যায়।  এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা একটি ভিডিওর সাথেও ভাইরাল ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

পরবর্তিতে,  গুগল ম্যাপের সাহায্যে লোপবুরি শহরের ২০২০ সালের ডিসেম্বরের একটি স্যাটেলাইট ভিউ দেখা হয়, যার সাথে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা রাস্তা, তোরণ এবং স্থাপনার হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। কিন্তু, বানরদের মারপিটের ভিডিওটি রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনেক আগে তথা কমপক্ষে ২০২০ সালের ১১ মার্চ থেকে খুঁজে পাওয়া যায়।

তাছাড়া,  নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, শ্রী রামচন্দ্রের মূর্তি অযোধ্যায় পৌছানোর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিপুল সংখ্যক বানর অযোধ্যায় রওনা দিয়েছে।  সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh