যা যাবি করা হয়েছে: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। বাংলাদেশেকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ও বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিবের সাথে লড়তে এসে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে তাদের।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে: দাবিটি মিথ্যা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বোর্ড সভায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে সাময়িক নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের উপরে সে দেশের সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচিত কোন ক্রিকেট বোর্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। সেখানে সরকারি হস্তক্ষেপ আইসিসির রীতিবিরূদ্ধ। সে ধরনের প্রমাণ পাওয়ায় আইসিসি শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ডের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) শ্রীলঙ্কাকে কী কারণে নিষিদ্ধ করেছে তা জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করা হয়। যার দ্বারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর ওয়েবসাইটে ১০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে “Sri Lanka Cricket suspended by ICC Board” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিটি দেখুন এখানে।
বিজ্ঞপ্তিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কাকে নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে আইসিসি উল্লেখ করেছে যে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট আইসিসির একটি সদস্য হিসাবে তার বাধ্যবাধকতাগুলোর গুরুতর লঙ্ঘন করছে। সদস্যপদের ক্ষেত্রে কোনো দেশকে যেসব নিয়ম-কানুন মানতে হয়, শ্রীলঙ্কা সেগুলো লঙ্ঘন করেছে। বিশেষ করে তারা নিজেদের স্বায়ত্তশাসন ধরে রাখতে পারেনি। মুক্ত থাকতে পারেনি দেশের অভ্যন্তরীণ সরকারী হস্তক্ষেপ থেকেও। যে কারণে আইসিসি বোর্ড তাদের নির্বাহী সভায় শ্রীলঙ্কাকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির কারণে শ্রীলঙ্কা সরকার পুরো বোর্ড বরখাস্ত করেছিল। বিশ্বকাপে ভারতে দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)। এরপরে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে। তবে এর দুই দিন না যেতেই দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে আগের বোর্ড পুনর্বহাল করা হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে একটি বোর্ড মিটিং করে এবং শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডকে (এসএলসি) নিষিদ্ধ করে। নিষেধাজ্ঞার ফলে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড আইসিসি থেকে আর কোনো সাহায্য পাবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আহমেদাবাদে ১৮-২১ শে নভেম্বর একটি বৈঠক করবে, সেখানে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে বিবিসি বাংলা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, ০৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টাইমড আউট হন শ্রীলঙ্কার এঞ্জেলো ম্যাথিউস। টাইমড আউটটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা সমালোচনা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে এভাবে আউট করা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও সাকিব আল হাসানের জন্য “কলঙ্কজনক” আখ্যা দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। ডেইলি স্টার থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত দেখুন এখানে।
তাছাড়া, শ্রীলঙ্কায় গেলে সাকিবকে পাথর মারার হুমকিও দিয়েছেন ম্যাথিউসের ভাই ট্রেভিন ম্যাথিউস। deccanchronicle.com নামক ওয়েবসাইট থেকে এমনটিই জানা গেছে। বলাবাহুল্য, ঘটনাটির কিছুদিন পরেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। যে কারণে বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় শ্রীলঙ্কাকে আইসিসি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তবে সার্বিক তথ্য-উপাত্ত যাছাই করে দেখা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। কিন্তু সেটা ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার কারণে নয়।
তাই এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।