সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, নবীজির রওজা মোবারক থেকে আসমানের দিকে একটি সিঁড়ি দেখা গেছে’। অনেকেই এই ভিডিও দেখে বিস্মিত হচ্ছেন। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওতে আসমানী সিঁড়ি কিংবা অলৌকিক কিছুই নেই। ২০১৫ সালে আরবি-ভাষী অঞ্চলে এই ভিডিওটি প্রথম ভাইরাল হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্যাপশনে একই ভিডিও বিভিন্ন দেশেই ভাইরাল হচ্ছে।
মন্তব্যের ঘরে, স্বভাবতই, মানুষ ভিডিওটিকে সত্য ভেবে মন্তব্য করেছেন।
আমাদের অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি এই ভিডিওটি ফেসবুকে বাংলায় প্রথম আপলোড করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর, শাকিল প্রধান নামের এই ব্যক্তি, 💗সোনালী দিন💗 নামের গ্রুপে।
সেখান থেকেই মূলত বাংলা ভাষায় এই গুজবের শুরু। তবে আরবী ভাষায় এই গুজবের শুরু কিছুটা ভিন্ন।
আরবী ভাষার ওয়েবসাইট Buratha News ০৬-০৩-২০১৫ সালে ভিডিওটি প্রকাশ করে– “Redness of the dome of the Prophet’s Mosque (video)” শিরোনামে। তাদের এই রিপোর্টে দাবি করা হয় মসজিদে নববীর গম্বুজ লাল হয়ে গেছে, আর এটি ফাতেমা-আল-জাহরার শাহাদতের দিনে ঘটেছে বলে ব্যাপারটার ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
মসজিদে নববী ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই মসজিদ কমপ্লেক্স এর মধ্যেই মহানবী (সা) এর রওজা অবস্থিত।
মসজিদে নববীর গম্বুজটি সবুজ রঙের। ২০১৫ সালের মার্চে এই সবুজ গম্বুজ লাল হয়ে যাচ্ছে, এবং বহু মানুষ সেটা ভিডিও করছেন- এই অংশটি সত্য।
কর্তৃপক্ষ একটি বৈদ্যুতিক বাতির সাহায্যে এই সবুজ গম্বুজ লাল করার ব্যবস্থা করছিলেন। ইফতারির সময় অপেক্ষমান জনতাকে জানানোর জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশেও বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায় লাল রঙের বাতি জ্বালিয়ে বা নিভিয়ে সুন্নত নামাজ পড়ার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পূর্বে খুতবার সময় এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়।
২০১৫ সালে ‘অলৌকিক উপায়ে সবুজ গম্বুজ লাল হয়ে গিয়েছে’ গুজব ছড়ানোর পরে অনেক আরবি-ভাষী ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজই বিষয়টা পরিষ্কার করে দেয় এবং গুজব নিরসনের চেষ্টা করে।
আরবী ভাষার ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট dagegad এর রিপোর্টে জানা যায় , এই আলোকসজ্জাটি প্রিন্স ফয়সাল বিন সালমানের নির্দেশে করা হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন যে এই আলোকসজ্জা দিয়ে যেন মানুষকে রমজান মাসে ইফতারের সময় জানানো যায়, বিশেষত সে সব এলাকায় যেখানে মসজিদে নববী এবং মসজিদুল হারামের আজানের শব্দ পৌঁছায় না।
একই তথ্য পাওয়া যায় আরবি-ভাষী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে । যেমন দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
সম্ভবত, প্রথমবারের মত এই লাল আলো জ্বলতে দেখে দর্শনার্থীরা চমকে যান, এবং এর পেছনের কারণ জানা না-থাকায় এটাকে অলৌকিক ঘটনা ভেবে ভিডিও করতে থাকেন। এমন একটি ভিডিওই ভুল ক্যাপশনে ভাইরাল হয়েছে।
২০২২ সালেও কাবা ঘরের দরজা খোলার একটি ভিডিও ‘জিনদের নামাজ পড়ার ভিডিও’ দাবিতে ভাইরাল হয়েছিল। এ বিষয়ে দেখুন রিউমার স্ক্যানার এর এই প্রতিবেদন।
বাংলা ভাষায় এই একই ভিডিও প্রচারিত হওয়ার সময় অলৌকিক লাল আলোর বদলে দাবি করা হয়, এই ভিডিওতে ‘আসমানে ওঠার সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে’ ।
তবে ভিডিওতে কথিত সিঁড়ি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এটা মসজিদে নববীতে থাকা ছাতার ছায়া। রোদ থেকে দর্শনার্থীদের রক্ষার জন্য এই ধরনের বিশালাকার ছাতা মসজিদে নববী চত্বরে রয়েছে। দুইটা পাশাপাশি ছাতার সংযোগস্থলকে একটা বিশেষ কোণ থেকে ছবি তুললে এরকমই দেখাবে।
অনলাইনে পাওয়া মসজিদে নববীর ছাতার অন্যান্য ছবির সাথে ভাইরাল ভিডিওর ছবিতে পাওয়া ছাতার ডিজাইন মিলে যাচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই ছাতার কোণাগুলো বড় একটি বৃত্তচাপ (arc) এর আকার ধারণ করেছে।
অর্থাৎ,এটা প্রমাণিত যে ছাতা বাদে এখানে কোনো ধরনের সিঁড়িই ছিল না।
মসজিদে নববী থেকে আসমানে যাওয়ার সিঁড়ি দেখা গেছে- এই মর্মে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমেই কোনো খবরও প্রকাশিত হয়নি।
তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?