“স্টেপ ডাউন ইউনুস” শিরোনামে ভুয়া পিটিশন লিংক বানিয়ে ফিশিং প্রতারণার চেষ্টা

161
“স্টেপ ডাউন ইউনুস” শিরোনামে ভুয়া পিটিশন লিংক বানিয়ে ফিশিং প্রতারণার চেষ্টা
“স্টেপ ডাউন ইউনুস” শিরোনামে ভুয়া পিটিশন লিংক বানিয়ে ফিশিং প্রতারণার চেষ্টা

বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়েই অনলাইন পিটিশন আন্দোলন সংগ্রামের একটি জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে। সংখ্যায় বেশি সাক্ষর সংগৃহীত হলেই যে সব সময় এটি কাজ করে এমন নয়, তবে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এটি ভালো ফলাফল দেয়। আবার ফিশিং লিংক দিয়ে ভুয়া পিটিশনে সাক্ষর সংগ্রহের ঘটনাও ঘটে। ফিশিং লিংক ব্যবহার করে হ্যাকাররা মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের নামে এমন একটি ফরম অল্প সময়ের জন্য ফেসবুকে দেখা যায়। অপরচুনেটিজ ফর ইউ নামের ওই ফেসবুক পেজে গিয়ে পরে আর ওই পোস্ট পাওয়া যায় নি। তবে আলাদাভাবে পিটিশন ফরমের স্কৃনশটটি পাওয়া গেছে।

স্ক্রিনশটে পাওয়া ওয়েবসাইটটি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, “MPETITION.ORG” এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। পরবর্তীতে ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রেশন অনুসন্ধান করে দেখা যায়, চলতি বছরের আগস্টে ওয়েবসাইটটি খোলা হয়েছে এবং ২০২৫ এর আগস্টে এক্সপায়ার করবে। অর্থাৎ, মাত্র দুইমাসেরও কম সময় হলো ওয়েবসাইটটি খোলা হয়েছে। 

প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধানে একই ওয়েবসাইটের আরেকটি পিটিশন খুঁজে পাওয়া যায়। রেবেকা চেপতেগি (Rebeca Cheptegi) নামের একজন খেলোয়াড়ের নামে খোলা একটি পিটিশনের পেজ পাওয়া গেলেও মূল ওয়েবসাইটে যাওয়া যায় নি। সম্ভবত মূল ওয়েবসাইটের সাব-ডোমেইনে কিছু পেজ খুলে এমন পিটিশনগুলো বানানো হয়। এর আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়েও একটি পিটিশনের লিংক পাওয়া যায় ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদন থেকে। 

সবগুলো পিটিশনের মধ্যে কিছু মিল পাওয়া যায়। সবগুলোর শুরুতেই বলা হচ্ছে, ২৫৬৩০ জন মানুষ সাইন করেছে। একই সংখ্যা তিনটি ভিন্ন পিটিশনে। এছাড়া ভিতরে অনেক অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। কাউন্টডাউনে স্বচ্ছতা নেই, বিভিন্ন আইডি থেকে কমেন্ট করা আইডিগুলোরও হদিস নাই এমন ছোট ছোট অনেক অসংগতি। এছাড়া এই ওয়েবসাইটটিকে বিভিন্ন ভেন্ডরের মাধ্যমে মেলিসিয়াস বলা হচ্ছে। একটি আসল পিটিশন ওয়েবসাইটে, ঘটনার বিবরণ, ওয়েবসাইটের পিছনে কারা আছে, তাদের ফান্ডিং কারা করে এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকে কিন্তু ভুয়া ওয়েবসাইটে এগুলো পাওয়া যায় না। একটি আদর্শ পিটিশনের চেহারা দেখতে পারেন এই লিংক থেকে। 

Screenshot

অনেক সময় কোনো প্রতিষ্ঠান বিপরীত উদ্দেশ্যেও কোনো পিটিশনের আয়োজন করতে পারে। তারা হয়তো এর ফলাফল কারো কাছে পেশ করবে না, কিংবা এর পক্ষে বাস্তবে কোনো প্রচার-প্রচারণাও চালাবে না, কিন্তু আগ্রহীদের নাম, ইমেইল এবং ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে রাখবে। এবং পরবর্তীতে তাদের এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে তাদের মতামত এবং আদর্শিক অবস্থানকে প্রভাবিত করার জন্য। এটা অনেকটাই ফেসবুকের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ক্যালেঙ্কারির মতো, যেখানে ব্যবহারকারীদের লাইক, কমেন্ট গবেষণা করে পাওয়া তথ্যর ভিত্তিতে তাদের উপর তৈরি প্রোফাইল অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন প্রদার্শন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে পর্যন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

এ ধরনের উদ্যোগের প্রধান অর্জন হল, এগুলো মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, সমাজে আলোচনার জন্ম দেয়, এবং যথেষ্ট সাড়া পেলে সে আলোচনা গণমাধ্যম পর্যন্ত উঠে আসার সুযোগ তৈরি করে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে এবং প্রত্যক্ষভাবে যদি কোনো ফলাফল পাওয়া নাও যায়, দীর্ঘমেয়াদে এবং পরোক্ষভাবে সমাজে এগুলোর কিছু প্রভাব থাকেই। এছাড়াও এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে ভোটদাতাদের একটি ডাটাবেজ তৈরি হয়, যেখানে তাদের নাম, ইমেইল আইডি এবং ফোন নাম্বার সংরক্ষিত থাকে। ফলে ভবিষ্যতে অনলাইন থেকে বের হয়ে যদি বাস্তব জগতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, যেমন মিছিলের আয়োজন কিংবা অর্থ সংগ্রহ করা, সেক্ষেত্রে তাদেরকে সহজেই অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানোর সুযোগ থাকে। 

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। চার দিনের এই সফরে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে তিনি ৪০টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ ছাড়া তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ড. ইউনূস অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ওই সময় উপদেষ্টার আবাসস্থল হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের সামনে এবং জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে থাকাকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। 

দ্য ইকোনমিক টাইমসের ২৪ সেপ্টেম্বরের এক প্রতিবেদনে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কয়েকটি ভিডিও আপলোড করে পৃথক ওই দুটি বিক্ষোভের খবর জানানো হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের সামনে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে অংশ নেওয়া এক বিক্ষোভকারী বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। তিনি এখনও আমাদের প্রধানমন্ত্রী, ড. ইউনূস ফিরে যান। এখানেই স্টেপডাউন ইউনূস স্লোগানটি দেওয়া হয়। তার দুইদিন পর থেকে  অনলাইনে এই পিটিশন ফরম দেখা যায়। 

সম্প্রতি এক্স ও ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে  মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকার বিরোধী পোস্টে #স্টেপডাউনইউনূস (#stepdownyunus), #স্টেপডাউনডিআরইউনূস (#stepdowndryunus) এবং #স্টেপডাউনইউনূস (#stepdownyounus) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার হতেও দেখা যাচ্ছে।

No Factcheck schema data available.