বিশালাকার এই পাথরটি পিরামিডে ব্যবহৃত হয় নি

25
বিশালাকার এই পাথরটি পিরামিডে ব্যবহৃত হয় নি
বিশালাকার এই পাথরটি পিরামিডে ব্যবহৃত হয় নি

Published on: [post_published]

কিছু ফেসবুক পোস্টে বিশালাকৃতির একটি পাথরকে মিশরের পিরামিড তৈরীতে ব্যবহৃত পাথর বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, পাথরটি মূলত লেবাননের একটি চূনাপাথর খনিতে অবস্থিত, অন্যদিকে পিরামিডের অবস্থান মিশরে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাথরখণ্ড। এটির ওজন ১৬৫০ টন যা পিরামিডে ব্যবহৃত পাথরগুলোর ওজনের থেকে শতগুণ বেশি। ধারণা করা হয় এই খন্ডটি কমপক্ষে ২০০০ বছর পুরনো অন্যদিকে পিরামিড প্রায় ৪৫০০ বছর পুরনো। অর্থ্যাৎ, এই পাথরের থেকে পিরামিডের বয়স কমপক্ষে ২৫০০ বছর বেশি। এছাড়া নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকেই এই পাথরের সাথে পিরামিডের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় নি।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই পাথরের ছবির সাহায্যে অনুসন্ধান করলে, আমেরিকার স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটউট প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে “The Largest Manmade Block Ever Was Just Discovered in Lebanon” শিরোনামে ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই পাথর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসহ ছবিটি পাওয়া যায়। জানা যায়, ছবিটি জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ইনস্টিটিউট থেকে নেয়া হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া ছবির সাথে মূল ছবিটি তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি ভাইরাল এই ছবিটি কিছুটা বিকৃত। মূল ছবিতে পাথরের গায়ে একটি লেখা দেখতে পাওয়া যায় যা সাম্প্রতিক ছবিটিতে মুছে ফেলা হয়েছে। যদিও মুছে ফেলার কারণ পরিষ্কার নয়।


মূলত জার্মান এবং লেবাননের প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল এই পাথরটি খুঁজে পান। তাদের ধারণা অনুযায়ী, এই পাথরটি মানুষের হাতে নির্মিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাথরখণ্ড (Stone Block)। এটি আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত “দ্য স্টোন অফ দ্য প্র্যাগনেন্ট ওমেন” নামের পাথরটি ছিলো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ হাতে নির্মিত পাথরখণ্ড। সেটির ওজন ছিলো ১২৪০ টন এবং লেবাননের এই পাথরটির ওজন ১৬৫০ টন।

 

ভাইরাল এসব ফেসবুক পোস্টে উক্ত পাথরটিকে পিরামিডে ব্যবহৃত পাথরগুলোর একটি বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু এই দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি, কিংবা পাথরটি আবিষ্কারকদের কেউ এই দাবি করেন নি যে এটি পিরামিডের কোনো পাথরখণ্ড। পিরামিডের পাথরখণ্ডের সাথে এই পাথরখণ্ডের প্রাথমিক কয়েকটি পার্থক্য তুলে ধরা হলো-

 

প্রথমত, এই পাথরের ওজন ১৬৫০ টন আর পিরামিডে ব্যবহৃত পাথরগুলোর গড় ওজন ২.৫ থেকে ১৫ টন। অর্থ্যাৎ, লেবাননের এই পাথরটি পিরামিডে ব্যবহৃত পাথর থেকে আনুমানিক ১০০ গুণ বেশি ভারী। এছাড়া “Fact Crescendo” প্রকাশিত নিম্নোক্ত ছবি থেকে একজন মানুষের স্বাপেক্ষে পিরামিডের একটি পাথরখন্ডের দৈর্ঘ্য/প্রস্থ/উচ্চতা অনুমান করা যায়।

 

 

অন্যদিকে, প্রায় একইভাবে লেবাননের পাথরটিকেও নিম্নোক্ত ছবি থেকে অনুমান করা যায় এবং বোঝা যায় যে, পিরামিডের পাথরগুলো থেকে এই খন্ডটি ঠিক কতটা বড়।

দ্বিতীয়ত, ধারণা করা হচ্ছে লেবাননের এই পাথরটি কমপক্ষে ২০০০ বছর পুরনো অর্থ্যাৎ, ২৭ খ্রিস্টাব্দের পাথর এটি। অন্যদিকে, পিরামিড প্রায় ৪৫০০ বছর আগে ২৫৫০ খ্রিস্টাব্দে তৈরী করা শুরু হয়। অর্থ্যাৎ, পিরামিডের পাথরখণ্ডগুলো লেবাননের পাথরটির চেয়ে প্রায় ২৫০০ বছর আগের।

 

তৃতীয়ত, এই পাথরটি পাওয়া গেছে লেবাননের বালবেক শহরে। এই শহরটিতে রোমান সাম্রাজ্যের ধবংসাবশেষ পাওয়া গেছে। সে থেকে ধারণা করা হয়, পাথরটি রোমান দেবতা জুপিটারের একটি মন্দিরে স্থাপন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু এটি এতোটাই ভারী ছিলো যে সেটিকে আর ব্যবহার করা হয় নি। অন্যদিকে, পিরামিড অবস্থিত মিশরে। লেবানন থেকে মিশরের দূরত্ব ৯২০ কিলোমিটার। অর্থ্যাৎ, এটি প্রায় অসম্ভব যে, এতো ভারি একটি পাথর কেউ মিশরের পিরামিড থেকে লেবানন নিয়ে আসবে।

সুতরাং, লেবাননের এই পাথরটি যৌক্তিকভাবেই পিরামিডে ব্যবহৃত পাথর হতে পারে না। এছাড়া এর পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য থেকে মিশরের পিরামিড এবং এই পাথরের মধ্যে কোনো যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায় নি। একই বিষয়ে অন্য একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

 

এছাড়া এই পাথরের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন দ্য নিউ ইয়র্কারের এই নিবন্ধে

 

অতএব, সার্বিক বিবেচনায় ভাইরাল এই দাবিটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা হচ্ছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.