অন্য ধর্মের মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদেরকে মুসলিম ছেলেরা ধর্ষণ করতে পারে আল্লাহ এই বিধান রেখেছেন এমন মন্তব্য করেছেন মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুয়াদ সালেহ – এরকম একটি পোস্ট সম্প্রতি ফেসবুকে নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় এমন কোনো মন্তব্য করেন নি এই অধ্যাপক। বরং ২০১৪ সালে একটি টিভি চ্যানেলে তিনি মন্তব্য করেন – যুদ্ধবন্দী অমুসলিম নারীদের অপমানিত করার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার ব্যাপারে ইসলাম মুসলমান পুরুষদের অনুমতি দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতটি উল্লেখ না করে সেই অধ্যাপকের কথা সাধারণীকৃত করে বলায় ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিচ্ছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুয়াদ সালেহ মিশরের কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, ইসলামিক স্কলার এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। Middle East Media Research Institute (MEMRI) নামক সংস্থার ওয়েবসাইটে (যাদের মূল লক্ষ্য ইংরেজি অনুবাদসহ মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মিডিয়া রিপোর্ট প্রচার করা) সুয়াদ সালেহের একটি সাক্ষাৎকার পাওয়া যায় ‘Al-Azhar Professor Suad Saleh : In a Legitimate War, Muslims Can Capture Slavegirls and Can Have Sex with Them’ শিরোনামে। মূল সাক্ষাৎকারটি Al Hayat TV চ্যানেলে ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রচারিত হয়। সাক্ষাৎকারটি ইউটিউবেও পাওয়া যাচ্ছে (দেখুন এখানে, এখানে)।
এটি স্ট্রিম করে দেখা যায় সুয়াদ সালেহ মূলত বলেছেন, ”প্রাক-ইসলামিক সময় থেকে আরব জাতির বাইরেও বিভিন্ন জাতি এবং দেশে দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর শুধুমাত্র বৈধ যুদ্ধবন্দীদের দাস হিসেবে রাখার মাধ্যমে দাসপ্রথা একটি নিয়মের মধ্যে চলে আসে। নারী যুদ্ধবন্দীদের অপমান করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে যুদ্ধের সেনাপতি অথবা একজন মুসলমানের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সাথে স্ত্রীর মতো করে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা যায়। তবে কিছু সুবিধাবাদী এবং চরমপন্থী মানুষ ইসলামের ক্ষতি করার জন্য বলে যে, ‘আমি পূর্ব এশিয়া থেকে একজন নারীকে (একজন ক্রীতদাস) নিজ সম্পত্তি হিসেবে এনে আমার স্ত্রীর সম্মতিতে বাড়িতে স্থান দিব এবং দাসী হিসাবে তার সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করব।‘ ইসলাম এমন কথা কখনো বলেনি। ইসলাম বলে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে, তাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হওয়া যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদের থেকেই শুধুমাত্র বৈধ-মালিকানাধীন ক্রীতদাস পাওয়া যাবে। কিছু লোক এখন যা করছে তা কোরআন ও আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন, এর দ্বারা কোনোভাবেই আমাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।”
পুরো সাক্ষাৎকারে অন্য ধর্মের মেয়েদের ‘শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য মুসলিম ছেলেরা তাদের ধর্ষণ করতে পারবে বলে ইসলামে বিধান রয়েছে, এমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে ইউটিউব চ্যানেলে এ সাক্ষাৎকারটি ‘Female Islmaic Cleric Teaches That Enslaving and Raping Little Girls is Permissible in Islam‘ , ‘Suad Saleh Al Azhar – Rape of Captives for their humiliation is Allowed‘ এমন শিরোনামে পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ অন্য ধর্মের মেয়েদের মুসলিম ছেলেরা ধর্ষণ করতে পারবে এমন কোনো শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি পাওয়া যায়নি। উইকিপিডিয়ায় সুয়াদ সালেহকে নিয়ে প্রকাশিত আর্টিকেলের ‘বিতর্কিত’ সেকশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে আল-হায়াত টিভি চ্যানেলে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে যুদ্ধবন্দী অমুসলিম নারীদের অপমানিত করার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার ব্যাপারে ইসলাম মুসলমান পুরুষদের অনুমতি দিয়েছে – এমন কথা বলে এই অধ্যাপক বিতর্কিত হন।
সেখানে ইসলাম মুসলিম ছেলেদেরকে অন্য ধর্মের মেয়েদের ধর্ষণ করার অনুমতি দিয়েছে – সুয়াদ সালেহ এমন কোনো মন্তব্য করেছেন বলে উল্লেখ নেই।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?