সানি লিওনের বাংলাদেশে আসা নিয়ে বিভ্রান্তিকর ভিডিও

18
সানি লিওনের বাংলাদেশে আসা নিয়ে বিভ্রান্তিকর ভিডিও সানি লিওনের বাংলাদেশে আসা নিয়ে বিভ্রান্তিকর ভিডিও

Published on: [post_published]

সম্প্রতি “তথ্য মন্ত্রীর কাছে তথ্য ফাঁকি দিয়ে সানিলিওন এখন বাংলাদেশে” এমন শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। আট মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওতে কমপক্ষে চারটি অসংগতি রয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়, তথ্যগোপন করে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন কিন্তু নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে বিষয়টি সঠিক নয়। আরেকটি দাবিতে বলা হয়, তিনি বাংলাদেশে সিনেমার কাজের জন্য এসেছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছিলেন। তথ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে আরেকটি দাবিতে বলা হয়, পর্ণতারকা হওয়ার কারণে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু মূলত তথ্যমন্ত্রী এই কথা বলেননি। সবগুলো অসংগতি বিবেচনায় নিয়ে দেখা যাচ্ছে এই ভিডিওটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।

 

এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

“SK Media” নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে ৮ মিনিট ০৩ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওটি প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবি করা হয়, তথ্যমন্ত্রীর কাছে তথ্যগোপন করে সানিলিওন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশে আসার কারণ হিসেবে দাবি করা হয়, তিনি সিনেমায় কাজ করতে এখানে এসেছেন। আরোও বলা হয়, জাকির নায়েক বাংলাদেশে আসতে পারেন নাই কিন্তু সানি লিওন এসেছেন। এছাড়াও তথ্যমন্ত্রীর বরাতে দাবি করা হয়, মন্ত্রী বলেছেন সানি লিওন পর্ণতারকা তাই তিনি বাংলাদেশে আসতে পারবেন না। এছাড়াও এ সম্পর্কিত বিভিন্নদাবি করা হয়।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

দীর্ঘ এই ভিডিওতে প্রথমে বলা হয়, তথ্যমন্ত্রীর কাছে তথ্য ফাঁকি দিয়ে সানি লিওন বাংলাদেশে এসেছেন। এর সাথে তার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। এমন দাবির সপক্ষে গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তবে গত ০৯ মার্চ ২০২২ এ, বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে অভিনেত্রী কারনজিৎ করভোহরা তথা সানি লিওনের বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির তথ্য পাওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে তথ্য মন্ত্রী জনাব ড. হাছান মাহমুদ বলেন,  সানি লিওন তার নাম গোপন করে মার্কিন নাগরিক পরিচয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করেছেন, সেকারণে তার বাংলাদেশে আসার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।

কিন্তু এই বক্তব্যটি তথ্যমন্ত্রী দিয়েছেন সানি লিওনের বাংলাদেশে আসার আগে। কিন্তু তিনি দেশে কিভাবে এলেন এ বিষয়ে অফিসিয়াল কোনো বক্তব্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, সানি লিওনের উইকিপিডিয়া পেজের মতে তার আসল নাম কারনজিত কর ভোহরা এবং “সানি লিওন” তার স্টেজ নেম। তিনি একইসাথে কানাডা এবং আমেরিকার নাগরিক। এর আগে ১৪ এপ্রিল ২০২২ এ সানি লিওনের একটি টুইটের সূত্র ধরে হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সানি লিওন এখন ভারতেরও নাগরিক। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই বিষয়টি নিশ্চিত যে তিনি আইনগতভাবে মার্কিন নাগরিক এবং সানি লিওন তার আসল নাম নয়; এটি তার স্টেজ নেম।

দৈনিক যুগান্তরের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডিউটি অফিসার মোঃ খয়রুলের বরাতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে মোঃ খায়রুল বলেন, সানি লিওন আমেরিকার নাগরিক হিসেবে এসেছেন এবং তার কাছে বৈধ ভিসা ছিল। আবার ইমিগ্রেশন সম্পন্নের বিষয়ে তিনি বলেন, সব কাগজপত্র ঠিক থাকায় এই অভিনেত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।

আবার নাম গোপনের বিষয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনে সানি লিওনের স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সানি নাম গোপন করেননি। তার আসল নাম কারনজিৎ কর এটা সবাই জানেন তাই নাম গোপনের প্রশ্নই আসে না বলেও দাবি করেন তিনি।

অতএব দেখা যাচ্ছে, তথ্য গোপন করে সানি লিওনের বাংলাদেশে প্রবেশের কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও তার প্রবেশের আগে এমন একটি দাবিতে তথ্যমন্ত্রণালয় তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে। কিন্তু তার প্রবেশের পর এ ধরণের কোনো অভিযোগ মন্ত্রণালয় এখনো করেনি। তাই তিনি তথ্য গোপন করে প্রবেশ করেছেন কথাটি সঠিক নয়।

আরেকটি দাবিতে বলা হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশে এসেছেন সিনেমায় কাজ করতে। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিউটি অফিসারের তথ্যমতে তিনি ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছিলেন।

একই দাবিতে ঢাকা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই অন্যসব তারকার সঙ্গে তিনি ঢাকা এসেছিলেন; এর সঙ্গে কাজ বা পারিশ্রমিকের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এছাড়াও দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গানবাংলা টিভির কর্ণধার কৌশিক হোসেন তাপসের মেয়ের বিয়েতে অংশগ্রহণের উদ্দ্যেশ্যেই ঢাকায় আসেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনি ঢাকা ছেড়েছেন বলেও নিশ্চিত করেছে প্রতিবেদনটি।

এর আগে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সানি লিওনের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে। অতএব, বুঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশে কাজ করার অনুমতি তার নেই। তিনি ভ্রমণ ভিসাতেই এখানে এসেছেন।

ভিডিওর একটি অংশে দাবি করা হয়, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন সানি লিওন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না কারণ তিনি একজন পর্ণতারকা। কিন্তু মাননীয় মন্ত্রীর এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সানিলিওন প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যটি দেখুন এখানে

সুতরাং, পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে সানি লিওন সিনেমায় কাজ করতে নয় বরং একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে তার কাগজপত্র এবং পরিচয় আইনসম্মত ছিলো তাই তাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। তাই ইমিগ্রেশন নিয়ে সন্দেহেরও কোনো অবকাশ নেই। আবার তথ্যমন্ত্রীর কাছে কোনো তথ্য গোপন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন কি না এমন কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উক্ত মন্ত্রীর একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু সেটি সানি লিওনের দেশে আসার আগের ভাষ্য। অতএব, সানি লিওনের দেশে আসা নিয়ে উপরোক্ত ভিডিওকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.