সম্প্রতি “২৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন তাহসান খান এবং পরবর্তীতে দূর্নীতির অভিযোগে মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ পরেন তিনি”- এমন একটি দাবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষাটি প্রিলিমিনারি পর্যায়েই বাতিল ঘোষণা করা হয়। অর্থ্যাৎ, এর লিখিত কিংবা মৌখিক কোনোটিই অনুষ্ঠিত হয় নি। বিসিএস পরীক্ষায় সবগুলো ধাপ শেষ হওয়ার আগে কোনো ক্যাডার ঘোষণা করা হয় না, অতএব সেই পরীক্ষায় তাহসানের পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অন্যদিকে বাতিলকৃত ২৪তম বিসিএস পরীক্ষাটি পুনরায় অনুষ্ঠিত হয় ঠিকই, কিন্তু তার ফলাফল-তালিকায়ও তাহসান খানের নাম ছিলো না।
ডেইলি বাংলাদেশ নামে একটি নিউজ পোর্টালে “মায়ের আমলেই বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন তাহসান“- শিরোনামে ১০ জুলাই, ২০২৪ এ এই তথ্যটি প্রকাশিত হয়। যদিও সংবাদের বিস্তারিত অংশে বলা হয় যে, তাহসানের প্রথম হওয়ার বিষয়টি যাচাই করতে পারে নি তারা। অর্থ্যাৎ, যাচাই না করেই শিরোনামে তথ্যটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পরবর্তীতে কোনো ডিসক্লেইমার ছাড়া সংবাদটি মুছেও ফেলা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনেও একই দাবি করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁজে দেখা হয়। খুঁজতে গিয়ে “বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)” থেকে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের “পেপারক্লিপ” পাওয়া যায়। “২৪ তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল” শিরোনামে এই প্রতিবেদনটি ৪ মার্চ ২০০৩ এ প্রকাশিত হয়। জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ এ ২৪ তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এরপরই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠে। এক পর্যায়ে পরীক্ষাটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
এছাড়া দ্য বাংলাদেশ অবজার্ভারের একই দিনের আরেকটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, প্রথম আলো প্রকাশিত থেকে ৪ মার্চ, ২০০৩ এর পরিষ্কার একটি পেপারকাটিং পাওয়া যায়। যেখান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উক্ত পরীক্ষাটি ২৮ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রশ্নফাঁসের কারণে সেটি বাতিল হয়েছিলো।
অর্থ্যাৎ, অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটি কয়েকদিনের মধ্যেই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তাই প্রিলিমিনারি শেষ না হলে লিখিত কিংবা মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর বিসিএস পরীক্ষার সবগুলো ধাপ শেষ না হলে ক্যাডারপ্রাপ্তির কোনো অবকাশ নেই। অর্থ্যাৎ, উক্ত পরীক্ষার কোনো ফলাফল হয় নি। তাই সেখানে তাহসান খানের পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন।
ভাইরাল এসব পোস্টে আরোও বলা হচ্ছে, “২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী তাহসান খান। সেবারই ঘটে বিসিএসে সবচেয়ে বড় প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি, বাতিল হয় পরীক্ষা। দুর্নীতির জন্য আবারও বিসিএসের ভাইভা অনুষ্ঠিত হলে বাদ পড়েন তাহসান খান।”
যে পরীক্ষাটি ভাইভা পর্যন্ত যাওয়ার আগেই বাতিল হয়ে গেছে, সে পরীক্ষায় তাহসান কিভাবে ভাইভা থেকে বাদ পড়বেন?
পরবর্তীতে বাতিলকৃত ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষাটি আবার নেয়া হয় এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় তাহসান খানের নাম পাওয়া যায় নি, কিংবা তাহসান খান ঐ বিসিএস দিয়েছেন কি না — এ বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
সুতরাং, তাহসান খানের ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডার পাওয়ার পর সেটি বাতিল হয়ে যাওয়ার তথ্যটি ভিত্তিহীন। কেননা উক্ত বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। বিসিএস পরীক্ষা নিয়মানুসারে চূড়ান্ত ফলাফলের আগে ক্যাডার ঘোষণা করা হয় না। তাই পরীক্ষাই যেখানে পুরোপুরি সম্পন্ন হয় নি, সেখানে ক্যাডারপ্রাপ্তির দাবিটি অবাস্তব। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।