দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা এবং নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের নামে একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, তৈমুর নাকি বলেছেন “লন্ডনে সেন্ডমানি করতে পারিনি তাই তারেক সাহেব আমাকে বহিষ্কার করেছে”! ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই বক্তব্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং বহিষ্কারের পরে তৈমুর আলম খন্দকার তারেক রহমানকে ধন্যবাদ দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন , টাকা প্রদানসংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করেননি।
গুজবের উৎস
গত ৩রা জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে তার পদ থেকে প্রত্যাহার করেছিল বিএনপি । ৪ জানুয়ারি বিভিন্ন ফেসবুক পেজে থেকে ‘লন্ডনে সেন্ডমানি করতে পারিনি তাই তারেক সাহেব আমাকে বহিষ্কার করেছে’- শীর্ষক বিভিন্ন স্ট্যাটাস এবং পোস্টার ভাইরাল হতে দেখা যায় ।
এ সংক্রান্ত অধিকাংশ পোস্টে জার্মানভিত্তিক ডয়েচে ভেলে বাংলার একটি স্ক্রিনশট দিয়ে ক্যাপশনে যোগ করা হয়েছে- ‘লন্ডনে সেন্ডমানি করতে পারিনি তাই বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি-তৈমুর’ । যদিও উক্ত স্ক্রিনশটে লন্ডন কিংবা তারেক রহমান সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই।
ডয়েচে ভেলের ৩রা জানুয়ারি বিকাল ৫ টা ৪০ এর পোস্টে বলা হয়েছিল, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পদ থেকেও তৈমুর আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ৩ রা জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা ৮ মিনিটে এ সংক্রান্ত একটি নিউজ লিঙ্ক শেয়ার করা হয় । যেখানে বলা হয়, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে তার পদ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিএনপি। তৈমুর আলম খন্দকার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় তৈমুর আলম সেদিন নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমি মনে করি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটা সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আমাকে জনগণের জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন আমি রিকশাওয়ালাদের তৈমুর, রিকশাওয়ালাদের কাছে ফিরে যাব। ঠেলাগাড়িওয়ালাদের তৈমুর, ঠেলাগাড়িওয়ালাদারের কাছে ফিরে যাব। আমি গণমানুষের তৈমুর, গণমানুষের কাছে ফিরে যাব।
তার এই প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন- জনকন্ঠ , প্রথম আলো , ইনকিলাব ইত্যাদি।
লক্ষনীয়, তার বক্তব্যে তিনি আর্থিক লেনদেন কিংবা এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেননি। বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর বিরুদ্ধেও তিনি কোনো অভিযোগ করেননি বরং তারেক রহমানকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
৩রা জানুয়ারি নিজ বাসভবনে এই বক্তব্যের পরে তৈমুর আলম খন্দকার পরবর্তীতে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানেও তারেক রহমান কিংবা আর্থিক লেনদেনের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।
এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এর এই আনভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট থেকে নারায়ণগঞ্জ এর নির্বাচনী প্রচারণার বিভিন্ন ভিডিও এবং তৈমুর আলম এর বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। এসব বক্তব্য থেকেও তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেল না।
যেসকল পেজ ‘লন্ডনে সেন্ড মানি করতে না পারায় তৈমুরকে বহিষ্কার’ এর কথা বলছে, তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যসূত্র দেয়নি। বাংলা নিউজ ব্যাংক নামের একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, জানা গেছে, তৈমুর আলমের কাছে নাসিক নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য ১০ কোটি টাকা চেয়েছিল তারেক রহমান। —–নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, মূলত দলীয় মনোনয়নের জন্য তারেক রহমানকে টাকা না দেওয়ার ফলেই তাকে বহিষ্কার হরা হয়েছে।
এখানেও নির্দিষ্ট কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ করা হয়নি। ‘নাম প্রকাশ না করা বিএনপি’র এক সিনিয়র নেতার উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও , জনাব তৈমুর আলম বাংলা নিউজ ব্যাংক কে কোনো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, এমন কোনো তথ্য উক্ত প্রতিবেদনে নেই।
কাজেই ‘লন্ডনে সেন্ড মানি করতে না পারায় তারেক সাহেব আমাকে আমাকে বহিষ্কার করেছেন’ , কিংবা ‘লন্ডনে সেন্ডমানি করতে পারিনি তাই বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি’- তৈমুর আলম খন্দকার এর বরাতে এমন কোনো উক্তি কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে না। কেবলমাত্র কয়েকটা ফেসবুক পেজেই এই সংক্রান্ত ভুল উদ্ধৃতি প্রকাশিত হয়েছে।
এ খবরকে মিথ্যা এবং ফেক নিউজ দাবি করে অনেকেই এসব পেজে মন্তব্য করেছেন। যেমন –
এছাড়া, ‘তারেকের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলায় তৈমুরকে বহিষ্কার করেছে তারেক রহমান’ শীর্ষক আরেকটি পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।
তবে গুগল এবং ইউটিউবে অনুসন্ধান করে তারেক জিয়ার দুর্নীতি সম্পর্কে তৈমুর আলমের কোনো বক্তব্য খুজে পাওয়া গেল না।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত
এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার কে ভুলভাবে উদ্ধৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে ফ্যাক্টওয়াচ এর দৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তৈমুর এমন কোনো কথা বলেন নি। সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?