সম্প্রতি “আযান দেওয়ার কারণে গ্রেফতার এই ভাই গুলো” শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচুর শেয়ার হয়েছে। মূল ভিডিওটি ১৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে “মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন” নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়ে ধর্মীয় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগে যে দুই জন গ্রেফতার হয়েছেন, তার সাথে এই ভিডিওর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায়, উক্ত ভাইরাল হওয়া প্রতিবেদনটি মিথ্যা।
সম্প্রতি “আযান দেওয়ার কারণে গ্রেফতার এই ভাই গুলো” ক্যাপশনে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে পুরনো ভিডিওটি প্রচুর শেয়ার হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে,এখানে, এখানে, এবং এখানে।
“আযান দেওয়ার কারণে গ্রেফতার এই ভাই গুলো” শিরোনামের ভিডিওটির শুরুতে শোনা যায় কেউ একজন বলছেন “বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিংডং এ এখন জোহরের আজান শুরু হচ্ছে।“ পরবর্তীতে এই কথাটিই ফেসবুকে লিখে অনুসন্ধান করতেই বের হয়ে আসে ১৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও যা “মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন” নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে বাংলাদেশের পতাকা মাথায় জড়ানো মোহাম্মদ জসীম উদ্দীনকে আজান দিতে দেখা যাচ্ছে, তার সাথে ছিলেন আরও ৬-৭ জন। ২০ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে “তাজিংডং|| বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায় আযান !” শিরোনামে একই ভিডিও একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকেও প্রকাশিত হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে, তাজিংডং (বিজয় নামেও পরিচিত) সরকারিভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার সাইচল পর্বতসারিতে অবস্থিত। সরকারি হিসেবে তাজিংডং পর্বতের উচ্চতা ১,২৮০ মিটার (৪১৯৮.৪ ফুট)।
এদিকে, সম্প্রতি ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়ে ধর্মীয় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগে যে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এই ভিডিওর সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ‘মুহাম্মাদ শিব্বির বিন নজির’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ২৭ আগস্ট সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় আজান দেবার ছবি প্রকাশিত হয়। এরপর ৩১ আগস্ট (মঙ্গলবার) রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা কেশব বলেন, শিব্বির ‘সুন্দরবন ট্যুরিজম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে টুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করেন। সে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কিছু পর্যটক নিয়ে গত ২৭ আগস্ট সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সেই দুই জন।
উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে বিষয়টি স্পষ্ট যে, ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার সাথে “আযান দেওয়ার কারণে গ্রেফতার এই ভাই গুলো” শিরোনামের সাথে প্রচারিত হওয়া ভিডিওটির কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খবরটি মিথ্যা।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?