“তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে সৌদি আরব: রুশ গণমাধ্যম” – ভূয়া খবর

9
“তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে সৌদি আরব: রুশ গণমাধ্যম” – ভূয়া খবর “তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে সৌদি আরব: রুশ গণমাধ্যম” – ভূয়া খবর

Published on: [post_published]

সম্প্রতি “তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে সৌদি আরব: রুশ গণমাধ্যম” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশের কিছু মূলধারার সংবাদমাধ্যম। উক্ত সংবাদগুলোতে রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিক ও পার্সটুডে নামের একটি ওয়েব পোর্টালের বরাতে বলা হচ্ছে, “আফগানিস্তানে তালেবানের গোষ্ঠীকে সবার আগে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সৌদি সরকার।“। বাস্তবে, রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিক-এ এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। এছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি।

১৭ ও ১৮ আগস্ট ২০২১ তারিখে উক্ত মিথ্যা শিরোনামযুক্ত একটি খবর ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ থেকে শেয়ার হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে,  এখানে এবং এখানে।


অনুসন্ধানে দেখা যায়, আরটিভি’র “তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে সৌদি আরব: রুশ গণমাধ্যম” শিরোনামযুক্ত খবরটিকে হুবহু কপি করে সংবাদ প্রচার করেছে মানবকন্ঠ, ইনসাফবিডিটুয়েন্টিফোর ডট কম সহ একাধিক অনলাইন পোর্টাল।

উক্ত সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “সোমবার কোনও কোনও গণমাধ্যম জানিয়েছে, তালেবানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে রিয়াদ। রাশিয়ার গণমাধ্যম স্পুটনিক জানিয়েছে, প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব তালেবানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এই রিপোর্ট সম্পর্কে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।“ অথচ রাশিয়ার গণমাধ্যম স্পুটনিকের ওয়েবসাইটে এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। এছাড়া, “সোমবার কোনও কোনও গণমাধ্যম জানিয়েছে, তালেবানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে রিয়াদ।“ লাইনটিতে কোনো তথ্যসূত্র নেই, ফলে “তালেবানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে রিয়াদ।“ তথ্যটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।



এদিকে তালিবান বিদ্রোহীরা রাজধানী কাবুল দখল করার পর সৌদি আরব ১৬ আগস্ট ২০২১ (সোমবার) তালেবান এবং “সমস্ত আফগান দল” কে জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসলামী নীতির উপর ভিত্তি করে সৌদি আরব আশা করে যে তালেবান এবং সমস্ত আফগান দল নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় কাজ করবে।

১৫ আগস্ট ২০২১ (রবিবার) আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছে। তালেবান যোদ্ধারা রাজধানী কাবুলে প্রবেশের পর দেশ ছেড়েছেন আশরাফ গনি।

এদিকে কাবুল পতনের পর থেকেই আলোচনা চলছে তালেবানদের নতুন সরকার গঠন নিয়ে। এরই অংশ হিসেবে সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির নেতারা। বুধবার এক তালেবান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তালেবান কমান্ডার এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের সিনিয়র নেতা আনাস হাক্কানি কারজাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে পুরনো সরকারের মূল শান্তিদূত আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তালেবান কর্মকর্তা।

এদিকে  তালেবানের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে কাজ করার ও ভবিষ্যৎ আফগান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত রোববার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আগ্রহের কথা জানান। সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেছেন, তালেবান তাদের দেশের জনগণ—নির্দিষ্ট করে বললে নারী ও কিশোরীদের মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখালে এবং দেশে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় না দিলে তাদের (তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের) সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র।

তবে স্বীকৃতির ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান জানিয়েছে, এখনই তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না দেশটির সরকার। এজন্য আগে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করবে ইসলামাবাদ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল ১৭ আগস্ট ২০২১ (মঙ্গলবার) বলেছেন, “তাদের সাথে তালেবানদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, আফগানিস্তানের নতুন শাসকরা মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখায় কি না তার উপর নির্ভর করবে তাদের সহযোগিতার বিষয়টি।“

এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তালেবানকে আফগানিস্তান সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই কানাডার।

উল্লেখ্য যে, প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দ্বিতীয় দেশ ছিল সৌদি আরব। পাকিস্তানের একদিন পরে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছুদিন আগে, ২৬ মে ১৯৯৭ তারিখে সৌদি আরব এই সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। তবে সম্প্রতি ১৫ আগস্ট ২০২১ (রবিবার) আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারের পতন হবার পর “প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে” এমন কোনো তথ্য রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিক-এ পাওয়া যায়নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই সংবাদটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

No Factcheck schema data available.