সম্প্রতি কিছু ভাইরাল ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থাকবে না। যার পরিবর্তে নতুন নিয়মে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এ ধরণের পোস্টগুলোর জন্য জনসাধারণের মাঝে এমন একটি বার্তা তৈরি হয়েছে যে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আর কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না। ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের নিয়মে যে নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়া হতো, তা পরিবর্তন করে সেখানে নতুন একটি নিয়মের অধীনে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তবে বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিষয়টির বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ডে সার্চে জাতীয় দৈনিকের একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। মে, ২০২২ তারিখে প্রকাশিত একল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা কাটিয়ে স্বচ্ছতা ও সহজীকরণে এনটিআরসিএ’র আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। নতুন আইনে থাকছে না শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। সেক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে শূন্যপদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে। শিক্ষক নিয়োগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে গড়ে তোলা হবে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি)।”
উল্লেখ্য যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে। এনটিআরসিএ’র নিবন্ধনের লিখিত-মৌখিক পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের একটি জাতীয় মেধাতালিকা রয়েছে। সারাদেশের শিক্ষক শূন্য আসনের তালিকা সংগ্রহ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। জাতীয় মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীরা নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারেন। মেধাক্রম অনুযায়ী এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের এ পদ্ধতির ব্যাপারে বেশকিছু নেতিবাচক সমালোচনা রয়েছে। তাছাড়া (এনটিআরসিএ) কর্তপক্ষের এসকল কার্যক্রমের পর্যাপ্ত সক্ষমতা নিয়েও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেকারণে এ প্রতিষ্ঠানের কাজের জটিলতা কাটাতে পিএসসি’র আদলে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে যেভাবে সারাদেশে শূন্য পদের বিপরীতে চাকুরিপ্রার্থীগণ পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীগণ মেধাক্রম অনুসারে চাকুরি পায়– সেভাবে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) নিয়োগ পরীক্ষা নেবে।
এ থেকে পরিষ্কার যে, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার কিছু সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে এখানে। কিন্তু পরীক্ষার বদলে “সরাসরি নিয়োগ” হবে – এমন কোনো প্রস্তাবনা নেই। ভাইরাল পোস্টের শিরোনাম থেকে এমন ধারণা হয়। ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নমুনা দেখুন নিচে:
বলাবাহুল্য, এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত আইন সম্পর্কে সাম্প্রতিক কোনো বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে এনটিআরসিএ কর্তপক্ষের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁরা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন যে, প্রস্তাবিত নতুন আইনটি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অর্থাৎ, ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলো যেহেতু আংশিক তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, সেই কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এ ধরণের পোস্টগুলোকে “আংশিক মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?