শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন?

13
শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন? শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন?

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছেঃ ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। বাস্তবে ভিডিওটি হচ্ছে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের। সেখানে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর সরকারের চার ‘টেকনোক্র্যাট’ মন্ত্রীকে পদত্যাগ করার জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশ সম্পর্কে বলা হয়েছিল। ‘টেকনোক্র্যাট’ শব্দটি বাদ দিয়ে এই ভিডিও নতুন করে আবার প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ভাইরাল ভিডিওটি সত্যিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ সংক্রান্ত কি না  এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। ভিডিওর শুরুতেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একটি ভিডিও প্রতিবেদনের ক্লিপ দেখা যায়। সেখানে ‘মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’- এমন একটি কথা ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একজন সংবাদ উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যায়। এরপর প্রতিবেদকের কাছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। সেখানে প্রতিবেদককেও একই কথা বলতে দেখা যায়।

তাই, এই ভিডিও প্রতিবেদনটির উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে সেখানে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর  আপলোড করা একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যার ক্যাপশনে লেখা ছিল “টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী”। এই প্রতিবেদনটি মূলত ছিল ২০১৮ সালে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃক টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ সংক্রান্ত।

দেখা যাচ্ছে যে, মূল ভিডিওর শুরু থেকে ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু থেকে বিভিন্ন অংশ কেটে বাদ দিয়ে ভাইরাল পোস্টগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে ‘টেকনোক্র্যাট’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু মাত্র ‘মন্ত্রী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এবং, এর সাথে বিএনপির বিভিন্ন কর্মীদের বর্তমান সরকারের পদত্যাগ কামনা এবং সরকারবিরোধী বক্তব্যের ভিডিও জুড়ে দিয়ে একটা ভিত্তিহীন দাবি তোলা হচ্ছে।

অন্যদিকে, মূল ভিডিওটি ছিল ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর সরকারের চার ‘টেকনোক্র্যাট’ মন্ত্রীকে পদত্যাগ করার জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশ সংক্রান্ত। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য,  নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বাইরে থেকে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় যারা মন্ত্রীপরিষদে স্থান পান তারাই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে চারজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ছিলেন তারা হলেন- প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।

তবে, বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা বর্তমান মন্ত্রীপরিষদের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বা নির্বাচিত মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলেছেন কি না এ সম্পর্কিত প্রমাণ নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ ভাইরাল এই প্রতিবেদনের সাথে বিএনপির বিভিন্ন কর্মীদের আওয়ামীলীগ সরকারের পদত্যাগ কামনা এবং এই সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্যের ভিডিও জুড়ে দিয়ে একটি ভিত্তিহীন দাবি করা হচ্ছে। তাই ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.