তিস্তা ব্যারেজ ও বন্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা

59
তিস্তা ব্যারেজ ও বন্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা
তিস্তা ব্যারেজ ও বন্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা

Published on: [post_published]

Rs Voice Tv নামক ফেসবুক পেজ থেকে বিভ্রান্তিকর ছবি দিয়ে একটা নিউজ প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে “চোখের পলকেই তলিয়ে গেল উত্তরাঞ্চল! সারাদেশে বন্যার আশঙ্কা।” তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এখানে যে ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে ,তা অতীতের অন্যান্য বন্যার ছবি । গত ২৫ শে মার্চ ভারত তাদের অংশের তিস্তার গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দিলেও সেটা খুব বেশি বিপদজ্জনক ছিল না।বর্তমানে  ব্যারেজের পানি বিপদসীমার নিচেই আছে।

গুজবের উৎস

Rs Voice Tv নামক ফেসবুক পেজ থেকে গত ৭ই এপ্রিল একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয় “হঠাৎ তিস্তার সব গেট খুলে দিলো আমাদের বন্ধু দেশ ভারত! চোখের পলকেই তলিয়ে গেল দেশের উত্তরাঞ্চল! সারাদেশে বন্যার আশঙ্কা”।

ভিডিওটির প্রথম অংশে দাবী করা হয় “ আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় দর্শক প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসজুড়ে তিস্তার নদী হয়ে যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেঁটে পাড় হন চরাঞ্চলবাসী। প্রায় ৩৫ বছর পর এই প্রথম সেই চিত্র পাল্টে গেছে।

অসময়ে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। এতে ডুবে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ-পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, গম ও মিষ্টিকুমড়া ক্ষেত। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপাড়ের লাখো কৃষক।”

নিউজটি দেখুন এখানে

একই ধরনের নিউজ করেছে আজকের বাংলা নিউজ নামক ফেসবুক পেজ। তাদের নিউজটি দেখুন এখানে

ছবি অনুসন্ধান

ভিডিওতে পুরনো বেশ কয়েকটি বন্যার বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে।

এমনই কয়েকটি ছবি দেখানো হল ।

১।

আলোচ্য ভিডিওর প্রথম অংশেই এই পানি প্লাবী ব্যারেজ দেখানো হয়।

এটি বাংলাদেশ বা ভারতের তিস্তা ব্যারেজ নয়। এটা ভারতের কোশি ব্যারেজের বন্যার ছবি যেটা Kishan নামক ইউটিউব চ্যানেল থেকে ২০১৯ সালের ১৪ই জুলাই প্রকাশ করা হয়।

২ ।

এটি সম্প্রতি ঘটা তিস্তার বন্যার ছবি না। ২০২০ সালের বন্যার ছবি যা ২৯ জুলাই যুগান্তর পত্রিকা থেকে প্রকাশ করা হয়।

৩।

ছবিটি তিস্তা সংলগ্ন এলাকার নয়। ভারতের কেরালার। এটা ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর Sprouts নামক ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়।


তবে ভিডিওতে কখনোই এই ফুটেজগুলোর মূল উৎস সম্পর্কে বলা হয়নি। বরং এই ফুটেজগুলি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, যে কেউই ভাবতে পারে, এগুলো সবই সাম্প্রতিক তিস্তা ব্যারেজ এবং সংলগ্ন এলাকার ছবি।

তথ্য অনুসন্ধান

গত ২৫শে মার্চের পর থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। তিস্তায় পানি বাড়ার নিউজটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। সেগুলো দেখুন এখানে এখানে এখানে এখানে

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এই তিস্তার পানি প্রবাহের কারণ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত , এবং সেই সঙ্গে গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ার কারণে এই পানি বেড়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন এর এই খবরে বলা হয়েছে, উজান ও ভাটিতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অসময়ে তিস্তায় বেড়েছে পানি প্রবাহ। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২’শ কিউসেক।

ফেসবুকে Rs Voice Tv পেজের ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয় উত্তরাঞ্চল তলিয়ে গেছে এবং সারাদেশে বন্যার আশংকা। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাতকার থেকে এমন আশংকার কথা শোনা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেনের সাক্ষাতকারে বলা হয় “ স্বাভাবিকভাবে এপ্রিলের এ সময় তিস্তা বালুচর হয়ে থাকে। কিন্তু ভারতে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তায় পানি কিছুটা বেড়েছে। পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়েছে । তবে এ পানিতে কিছু ফসলের  ক্ষতি হবে আবার তা কিছু ফসলের উপকারে আসবে। তাই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই ।”

২৬শে মার্চের পরে নতুন করে ভারতীয় অংশ থেকে ব্যারেজ এর গেট খুলে দেওয়ার কোনো খবরও পাওয়া যায়নি।

Flood Forecasting & Warning Centre থেকেও দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ কোন বন্যার আলামত পাওয়া যাচ্ছে না।

একই ওয়েবসাইট থেকে ডালিয়া-তিস্তা ব্যারেজ এর পানির উচ্চতার খতিয়ান থেকে দেখা যাচ্ছে,গত এক সপ্তাহে কখনোই পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। সর্বশেষ ৮ই এপ্রিল সকাল ৬ টার রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে, পানি বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিনিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা মোটেই বিপজ্জনক নয়।

তিস্তা ব্যারেজের একাংশ খুলে দেয়া হয়েছে সত্য। কিন্তু তাতে বন্যার কোনো আগাম পূর্বাভাস এখনো পাওয়া যায় নি। উত্তরাঞ্চল তলিয়েও যায় নি। ফলে এই সামগ্রিক দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিচ্ছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.