সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, প্রাণিরা অসুস্থ হলে তারা একা থাকতে পছন্দ করে ও লোকালয় থেকে লুকিয়ে থাকে এবং প্রাণিদের এই আচরণকে বলা হচ্ছে টার্মিনাল বুরোয়িং (Terminal Burrowing)। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে যে টার্মিনাল বুরোয়িং হচ্ছে এমন একটি আচরণ যখন কোন মানুষ হাইপোথারমিয়ায় (Hypothermia) আক্রান্ত হয় অর্থাৎ, যখন তার শরীর যে পরিমাণ গরম তাপ নির্গত করছে সে পরিমাণ তাপ উৎপাদন করতে পারছে না তখন সে কোন আবদ্ধ বা গরম কোন জায়গায়, যেমন: কেবিনেট বা ক্লোজেটের ভিতর, খাটের নিচে, বা ওয়ারড্রোবের পিছনে আশ্রয় নেয়। সুতরাং, টার্মিনাল বুরোয়িং আচরণটি কেবলমাত্র তাদের মধ্যেই দেখা যায়, যারা হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়। অন্য কোন রোগের বেলায় এই রকম আচরণের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত উক্ত দাবি সংবলিত কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
প্রাণিরা অসুস্থ হলে লোকালয় থেকে লুকিয়ে থাকার আচরণটি টার্মিনাল বুরোয়িং কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি যে, টার্মিনাল বুরোয়িং হচ্ছে এমন একটি আচরণ যখন কোন মানুষ হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং নিরাপদ জায়গা খুঁজে সেখানে আশ্রয় নেয়। হাইপোথারমিয়া হচ্ছে শরীরের সেই অবস্থা যখন কারও শরীর যে পরিমাণ গরম তাপ নির্গত করছে সেই পরিমাণ তাপ দ্রুত উৎপাদন করতে পারছে না এবং এই কারণে শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পায় এবং হৃদযন্ত্র, স্নায়ু ব্যবস্থা, ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়।
টার্মিনাল বুরোয়িং আচরণের ধারণাটি পাওয়া যায় ভয়াবহ হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কিছু মৃতদেহের অবস্থান থেকে। ১৯৯৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব লিগাল মেডিসিন এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দুজন জার্মান গবেষক হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা মৃতদেহের বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে যে, মৃতদেহের অবস্থানগুলো নির্দেশ করছে যে মৃত্যুর পূর্বে শেষ চেষ্টা হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। উক্ত গবেষকদ্বয় আরও উল্লেখ করেন যে, টার্মিনাল বুরোয়িং আচরণটি ব্রেইন স্টেমের (Brain Stem) একটি স্বাধীন (autonomous) প্রক্রিয়া। এটি হাইপোথারমিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে নিজেকে রক্ষার বোধ জাগিয়ে তোলে এবং এই কারণে সে নিরাপদ জায়গা খুঁজে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, কিছু উষ্ণ-রক্তবিশিষ্ট প্রাণি, যেমন: মেরু অঞ্চলের ভালুক, সজারু, ইঁদুর, মাছরাঙা প্রভৃতি শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বা তাদের খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখার জন্য মাটি খুঁড়ে বাসা, চেম্বার বা কলোনির মতো তৈরি করে যেখানে গরম তাপমাত্রা বাহিরের ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকবে। প্রাণিসমূহের এই আচরণকে বুরোয়িং (burrowing) বলা হয়।
অতএব, প্রাণিরা অসুস্থ হলে তারা লোকালয় থেকে নিজেদের লুকিয়ে ফেলে, এটা টার্মিনাল বুরোয়িং আচরণ – দাবিটি সঠিক নয়। কারণ, টার্মিনাল বুরোয়িং আচরণটি কেবল তাদের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়, যারা হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়। যেহেতু শেয়ারকৃত পোস্টে হাইপোথারমিয়ার উল্লেখ নেই, সেহেতু অন্য কোনভাবে অসুস্থ হয়ে প্রাণিরা নিজেদের লোকালয় থেকে লুকিয়ে ফেললে সেটাকে টার্মিনাল বুরোয়িং আচরণ বলা যায় না।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?