যা দাবি করা হচ্ছে:বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে র্যাব এবং সেনা মোতায়েন করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি মিথ্যা। অনুসন্ধানে মূলধারার দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোর জন্য সেনা মোতায়েনের কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তাছাড়া বাংলাদেশে এখনও কোনো জরুরি অবস্থা জারি করা হয় নি।
গুজবের উৎস: ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বেসরকারি টেলিভিশন “দেশ টিভি” এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল “কালবেলার” ভিডিও প্রতিবেদনের ফুটেজ ব্যাবহার করে দাবি করা হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে র্যাব সেনা মোতায়ন এবং জরুরি অবস্থার ঘোষণা।
প্রাথমিকভাবে ভাইরাল ভিডিওতে দেশ টিভি ও কালবেলার লোগোসহ যে ফুটেজগুলো দেখা যাচ্ছে তার উৎস খুঁজে বের করার জন্য ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে, গত ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ “নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে র্যাব” ও “সারা দেশে পুলিশের নতুন নির্দেশনা” শিরোনামে যথাক্রমে দেশটিভি এবং কালবেলার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত মূল ভিডিও প্রতিবেদনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। এই মূল ভিডিও দুইটির সাথে ভাইরাল ভিডিওর কিছু অংশের হুবুহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। মূল প্রতিবেদন দুটির কোথাও বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে র্যাব সেনা মোতায়েনের কথা বলা হয় নি।
অন্যদিকে, ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয় বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে র্যাব এর সাথে সাথে সেনা মোতায়ন করা হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গেলে bdnews24 এর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়, “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় সমগ্র বাংলাদেশের ৩০০টি নির্বাচনি এলাকায় আগামী ৩ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ হতে ১০ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত (যাতায়াত সময়সীমা ব্যতীত) সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের আদেশ দেওয়া হল।” এছাড়াও সেখানে সশস্ত্র বাহিনী কি কি ধরনের সহায়তা করবে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।
তাছাড়া, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোষ্টের ক্যাপশনে দাবি করা জরুরি অবস্থার ঘোষণার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে অনুসন্ধান করা হয়। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক মূলধারার গণমাধ্যমে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে সর্বশেষ জরুরি অবস্থার ঘোষণা করা হয়েছিলো ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তাঁর নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। তখন ড: ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল। এই নিয়ে BBC Bangla একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
সুতরাং, সকল দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।