ব্যাংক খাতে ফেরত আসা তিরিশ হাজার কোটি টাকাকে পাচারের অর্থ বলে দাবি

250
ব্যাংক খাতে ফেরত আসা তিরিশ হাজার কোটি টাকাকে পাচারের অর্থ বলে দাবি
ব্যাংক খাতে ফেরত আসা তিরিশ হাজার কোটি টাকাকে পাচারের অর্থ বলে দাবি

মোহাম্মাদ আরাফাত

Published on: [post_published]

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ব্যাংকে জমানো টাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমানতকারীরা তাদের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করায় ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকা বা তারল্য সংকট দেখা দিয়েছিল। ফলে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে আমানতকারীরা আবার তাদের হিসাবগুলোতে টাকা জমা রাখতে শুরু করায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই সীমা উঠিয়ে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সম্প্রতি দেশে অস্থিরতার মাঝে ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক খাতের বাহিরে চলে গিয়েছিল, তবে এর মাঝে ৩০ হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোতে ফেরত এসেছে। আহসান এইচ মনসুরের এই মন্তব্যটিকে অনেকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তারা দাবি করছেন, পাচার হয়ে যাওয়া ৩০ হাজার কোটি টাকা ফিরছে! কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এই ৩০ হাজার কোটি টাকাকে পাচারের অর্থ হিসেবে কোথাও উল্লেখ করেননি। বরং এগুলো আমানতকারীদের পুনরায় জমা রাখা টাকা। এদিকে, গভর্নরের মন্তব্যটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি এটিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য বলেও চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। এই বিষয়ে ড. ইউনূসের কোন মন্তব্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হওয়া পোস্টগুলোর দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে। 

একটি ভাইরাল পোস্টের নমুনা

গত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতের বাইরে ৭০ হাজার কোটি টাকা চলে যাওয়ার ব্যাপারে বলেন, এই কারণে টাকা তোলার ওপর সীমা আরোপ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফেরত এসেছে। টাকা উত্তোলনের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। মূলত দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে আমানতকারীরা তাদের টাকা হারানোর ভয়ে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উঠিয়ে ফেলায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেয়। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ টাকা উত্তোলনের উপর সীমা আরোপ করে। তবে পরবর্তীতে আমানতকারীরা ব্যাংকে পুনরায় টাকা জমা রাখতে আরম্ভ করলে তারল্য সংকট কিছুটা কমে আসে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ টাকা উত্তোলনের সীমাটি তুলে নেয়। তাছাড়া, ব্যাংকগুলোর উপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হিসাবপ্রতি দুই লাখ টাকা আমানত বিমার আওতায় থাকার কথা জানানো হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৯৫ শতাংশ হিসাবের বিপরীতে জমা অর্থের পরিমাণ দুই লাখ টাকা বা তার নিচে। ফলে কোন ব্যাংক যদি দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে ঐ ৯৫ শতাংশ হিসাবের বিপরীতে আমানতকারীরা দুই লাখ টাকা ফেরত পাবেন। 

প্রথম আলোর সৌজন্যে

সবকিছু মিলিয়েই গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপরের মন্তব্যটি করেন। তবে তার মন্তব্যটিকে অনেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছেন। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ঐ ৩০ হাজার কোটি টাকা আসলে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা যা এখন ফেরত আসছে! কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের কোথাও তিনি বলেননি এই ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অর্থ ছিল। সময় টিভি’র এই ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখলে তার মন্তব্যটি পরিস্কার বুঝা যাবে। ব্যাংক খাতের বাহিরে চলে যাওয়া ৭০ হাজার কোটি টাকা মূলত সেই টাকা যেগুলো আমানতকারীরা ভয়ে তুলে ফেলেছিলেন। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ৩০ হাজার কোটি টাকা বলতে সেই টাকাকে বুঝিয়েছেন যেগুলো আমানতকারীরা পুনরায় তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে আরম্ভ করেছেন। 


এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ঐ মন্তব্যটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি সেটিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য বলেও প্রচার করছেন! তবে আমাদের অনুসন্ধানে ড. ইউনূসের এমন কোন মন্তব্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এছাড়া, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আসা সম্পর্কে কাউকে কোন মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.