পায়ে শিকল পরিহিত নারীদের এই ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে তৈরি

14
পায়ে শিকল পরিহিত নারীদের এই ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে তৈরি পায়ে শিকল পরিহিত নারীদের এই ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে তৈরি

মোহাম্মাদ আরাফাত

Published on: [post_published]

সম্প্রতি “Dainik HinduBarta দৈনিক হিন্দুবার্তা” নামক একটি ফেসবুক পেইজ থেকে একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন লোক তিনজন বোরকা পরিহিত নারীর পায়ে শিকল পরিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন! তবে ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে যে, আলোচিত ছবিটি সম্পাদিত। মূলত দুই দশকেরও বেশি আগে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকের এরবিল শহর থেকে এই ছবিটি তুলেছিলেন Murat Düzyol নামের একজন ফটোগ্রাফার। সেই ছবিটিকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে বোরকা পরিহিত নারীদের পায়ে শিকল পরিয়ে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার কিছুদিন পরেই শিকলে পা বাঁধা নারীদের ছবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন বেশকিছু আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ছবিটি যাচাই করে দেখেছিল এটি সম্পাদিত। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হওয়া ছবিটিকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে। 
Screenshot of the viral post

“Dainik HinduBarta দৈনিক হিন্দুবার্তা” নামক ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত পায়ে শিকল পরিয়ে তিনজন নারীকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবিটির উৎস খুঁজে বের করতে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করেছি আমরা। এই অনুসন্ধানে Associated Press (AP) এ গত ২০ আগস্ট ২০২১ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, যেখানে আমাদের আলোচিত ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে উক্ত ছবিতে বোরকা পরিহিত তিনজন নারীর পায়ে কোন শিকল পরিয়ে রাখতে দেখা যায়নি। Associated Press এর ঐ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকের এবরিল শহর থেকে Murat Düzyol নামের একজন তুর্কি ফটোগ্রাফার তুলেছিলেন। তিনি AP কে জানান, ছবিটি যেদিন তোলা হয়েছিল সেদিন ঐ এবরিল শহরে নিহত দুইজন ইরাকির স্মরণে একটি অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ছবিতে দৃশ্যমান মানুষগুলো এবং সেটি তখনই তোলা হয়। 

Credit: The Associated Press

আমাদের আলোচিত ছবিটি দেখে অনেকে ভাবছেন ছবির ঐ তিনজন নারী তাঁদের স্বামীকে অনুসরণ করে পেছন পেছন হাঁটছেন, তবে ছবিটির ফটোগ্রাফার বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, “ছবির ঐ নারীরা একে অপরকে চিনতেন এটা স্পষ্ট, তবে সামনে থাকা ঐ লোকটিকে চিনতেন কিনা সেটি আমি নিশ্চিত নই।” 

পায়ে শিকল পরিয়ে নিয়ে যাওয়া নারীদের অনেকে আফগান নারী হিসেবে দাবি করেছেন। তবে এর মাঝেই আমরা জেনেছি যে, ছবিটি ২০০৩ সালে ইরাকের এবরিল নামক একটি শহর থেকে তোলা হয়েছিল। ফলে এটি কোনভাবেই আফগানিস্তানে তোলা ছবি নয়। মূলত ২০২১ সালের আগস্টে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে নারীদের পায়ে শিকল পরিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবিটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সেই সময় বেশকিছু আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা উক্ত ছবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখে এবং জানতে পারে যে, ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করা হয়েছিল। এমন কয়েকটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে। অর্থাৎ, ২০০৩ সালে ইরাকে তোলা একটি ছবিকে সম্পাদনা করে নারীদের পায়ে শিকল বসিয়ে সেটিকে আফগান নারীদের অবস্থা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

Credit: The Associated Press

উল্লেখ্য, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজটুয়েন্টফোর ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আফগান নারীদের পায়ে শিকল – এই ভুল ব্যাখ্যা সংবলিত ছবিটি ব্যবহার করেছিল। নিবন্ধটি পড়ার সময় পাঠকরা ঐ ভুয়া ছবিটিকে আসল ছবি ভেবে বসে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই!

Credit: bdnews24.com

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, তিনজন নারীকে পায়ে শিকল পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবিটি আসল নয়। বরং ইরাকে তোলা একটি ছবিকে সম্পাদনা করে ঐ নারীদের পায়ে শিকল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ দৈনিক হিন্দুবার্তার প্রকাশিত ছবিটিকে বিকৃত বলে সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.