হযরত ইব্রাহিম(আ) এর কবর শিরোনামে দীর্ঘ একটি কবরের ছবি ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল ছবিটি ভারতের হযরত শাহ দাউদ আলী (রঃ) এর মাজার এর একাংশের ছবি। এছাড়া হযরত ইব্রাহীম (আ) এর কবর রয়েছে ফিলিস্তিনের হেবরনে, যেটি একটি স্বাভাবিক আকৃতির কবর ।
গুজবের উৎস
Munshiganj Boys & Girls গ্রুপে জনৈক Sheikh Gafur গত ২৪শে ডিসেম্বর এটি প্রথমবারের মত আপলোড করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য গ্রুপ এবং পেজেও এটি ছড়িয়ে পড়ে। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে।
ইমেজ সার্চ
দেখা যাচ্ছে, লম্বা কবরের এই ছবিটি ২০২০ সালের Malanga DI KULLI পেজ থেকে আপলোড করা হয়েছিল। সেখানে ক্যাপশন ছিল – হযরত সৈয়দ শেখ দাউদ আউলিয়া🙏১৪৪ ফুট লম্বা দরগাহ🌹স্থান, ভেনাডু অন্ধ্রপ্রদেশ ❤জয় বাবা 🤲
অন্যান্য উৎস থেকেও ভেনাড়ু দরগার দীর্ঘ মাজার এর ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে এটি ভারতের ছবি। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের Nellore জেলায় Sullurupeta শহরে এই দরগা অবস্থিত।
একটি অনির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সুলতান মাহমুদ গজনভী এর সফরসঙ্গী হিসেবে সৈয়দ শাহ দাউদ ভারতে প্রবেশ করেছিলেন (আনুমানিক ১০০০ থেকে ১০২৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে)।
আরেকটি সূত্র দাবি করছে, তার মৃত্যুর পরে মাজারটি অলৌকিক উপায়ে ১৪৪ ফুট লম্বা হয়ে যায় । বর্তমানে সেই অবস্থাতেই এটি আছে।
হযরত ইব্রাহিম (আ) এর কবর
ইহুদী,খৃষ্টান এবং ইসলাম ধর্মের সম্মানিত নবী হযরত ইব্রাহিম (আ) এর কবর ফিলিস্তিনের হেব্রন শহরের Cave of the Patriarchs এ অবস্থিত ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনি, দুই পক্ষই এই স্থানটিকে পবিত্র বলে মনে করে এবং নবীদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে সম্মান করে। ইব্রাহিম (আ) ছাড়াও, এখানে হযরত ইসহাক (আ), হযরত ইয়াকুব (আ) এবং তাদের স্ত্রীদের কবর রয়েছে। মুসলিমদের কাছে এই স্থাপনাটি ইব্রাহিমী মসজিদ নামে নামে পরিচিত। ইহুদিরা আবার একে Cave of Machpelah নামে ডাকে।
ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে, রোমান রাজা হেরোড আনুমানিক ৩১ থেকে ৪ খৃষ্টপূর্বাব্দের মাঝে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। বাইজান্টাইন শাসনামলে খৃস্টান শাসকগণ এখানে একটি ব্যাসিলিকা স্থাপন করেন। ৬৩৭ সালে আরব মুসলিমরা এটিকে ‘ইব্রাহিমী মসজিদ’ হিসেবে রূপান্তর করেন। ১১০০ সালে খৃস্টান ক্রুসেডাররা এই মসজিদ এবং আশেপাশের অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এটাকে একটি গীর্জা হিসেবে রূপান্তর করে।
১১৮৮ সালে সুলতান সালাউদ্দিন আইউবী আবার এই স্থাপনাটিকে মুসলিমদের নিয়ন্ত্রনে আনেন। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল পশ্চিম তীরের হেব্রন শহর দখল করলে এই স্থাপনাটি ইহুদিদের দখলে আসে।
বর্তমানে স্থাপনার একটি অংশ মসজিদ এবং অন্য একটি অংশ সিনাগগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেও স্বীকৃত।
উক্ত কবরের ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, এটি স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের কবর। ১৪৪ ফুট কিংবা অতিদীর্ঘ কবর নয়।
কাজেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া উক্ত দীর্ঘ কবরটির সাথে হেবরনে হযরত ইব্রাহিম(আ) এর মূল কবরের কোনো সম্পর্ক নেই। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?