যা দাবিকরা হচ্ছে: দৈনিক কালবেলা এর বরাতে দাবি করা হচ্ছে যে,গত ১৮ই জুলাই নিহত কলেজছাত্র ফারহান ফাইয়াজ এর গৃহশিক্ষক ছিলেন একজন শিবিরকর্মী।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে: দৈনিক কালবেলায় ১৮ই জুলাই তারিখে এমন কোনো খবর প্রকাশিত হয় নি। অন্য কোনো গণমাধ্যমেও এ ধরনের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া গেল না।
এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো পোস্টটি দেখা যাচ্ছে জনৈক গোলাম সারোয়ার সাইফ পোটলা এর, যেটি ১৮ই জুলাই সন্ধ্যা ৬ টা ১০ মিনিটে পোস্ট করা হয়েছিল।
এই পোস্টে বলা হয়েছে, রেসিডেন্সিয়াল কলেজের মেধাবী ছাত্র ফারহান ফাইয়াজকে টিউশনি পড়াতো ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক আবির হোসাইন।
ফারহানের পরিবার জানতো না তার শিক্ষক সরাসরি শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। আজ সকালে ফারহানকে কল দিয়ে ঘুরতে বের হবে বলে নিয়ে যায় বাসা থেকে। তারপর কৌশলে ফারহানকে হত্যা করে।
সুত্র: কালবেলা নিউজ।
শিবিরের এরকম নোংরা রাজনীতির জন্য আর কত মায়ের বুক খালি হবে। এদেরকে ছাড় দেয়া হবেনা।
বি:দ্র: ফারহান আওয়ামী পরিবারের লোক।
দেশ আমার আপনার সকলের, রক্তপাত বন্ধ করুন।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
দৈনিক প্রথম আলো , দ্য ডেইলি স্টার এবং দৈনিক সমকালে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, গত ১৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হয় ধানমন্ডি রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজ।
যেহেতু ফেসবুকে ১৮ই জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ফারহান ফাইয়াজ এর মৃত্যুর সংবাদ (এবং তাঁর গৃহশিক্ষকের শিবির-সংশ্লিষ্টতা) নিয়ে পোস্ট এসেছে, সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায় যে, ১৮ই জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের আগে দিনের কোনো এক সময়ে দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
কালবেলার অনলাইন আর্কাইভ থেকে ১৮ই জুলাই প্রকাশিত সকল খবর পর্যালোচনা করে দেখা গেল, ফারহান ফাইয়াজ সম্পর্কিত একটি মাত্র খবর সেদিন কালবেলায় প্রকাশিত হয়েছিল, এবং এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে।
ধানমন্ডিতে সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়ালের শিক্ষার্থীর মৃত্যু শিরোনামযুক্ত এই খবরের ভেতরের অংশে বলা হয়, রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফারহানুল ইসলাম ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফায়াজ) নিহত হয়েছেন। তার বয়স ১৮ বছর।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ধানমন্ডির পুরোনো ২৭ নম্বর সড়ক এলাকায় তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে ফারহানের লাশ লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ্রগ্রহণের কথা ছিল তার।
মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে ফারাজের নিকট আত্নীয় নাজিয়া খান জানিয়েছেন, ‘তারা আমার শিশুকে হত্যা করেছে। এমনকি তার বয়স ১৮ বছরও ছিল না। আমি ফারহান ফাইয়াজ এর হত্যার বিচার চাই।’
এর আগে বেলা ১১টা থেকে রাপা প্লাজার পাশের মোড় থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়।
দেখা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ সংবাদের কোথাও ফারহানের গৃহশিক্ষক সম্পর্কে কোনো তথ্য এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
কালবেলার অনলাইন আর্কাইভে ২৩শে জুলাই থেকেই ২৬শে জুলাই পর্যন্ত ভুক্তিগুলো পর্যালোচনা করেও দেখা গেল, ফারহান ফাইয়াজ সম্পর্কে আর কোনো প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করেনি। (১৯শে জুলাই থেকে ২২শে জুলাই দেশব্যাপী ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে এই ৫ দিনে কালবেলার অনলাইন আর্কাইভে কোনো প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে না)।
অর্থাৎ, যে কালবেলাকে উদ্ধৃত করে ফারহান ফাইয়াজের গৃহশিক্ষকের সাথে শিবির-সংশ্লিষ্টতার দাবি করা হচ্ছে, সেই কালবেলাতেই এমন কোনো সংবাদ দেখা যাচ্ছে না।
ফারহান সম্পর্কে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ জানিয়েছে, এই তথ্যটি ভুয়া। কালবেলা কিংবা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি।
সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এমন দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।