সম্প্রতি পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক প্রাণী জনাথন (Jonathan) নামের একটি কচ্ছপ — এমন দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে জনাথন পৃথিবীর সবচেয়ে বয়ষ্ক প্রাণী হলেও ভাইরাল ছবিটি জনাথনের নয়। গ্যালাপগোস প্রজাতির পঞ্চাশ বছর বয়ষ্ক অন্য একটি কচ্ছপের ছবি এটি।
ভাইরাল এসব পোস্টে একটি বিশাল আকৃতির কচ্ছপের ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ছবির ক্যাপশনটি সম্পূর্ণ তুলে ধরা হলোঃ
“পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক প্রাণী জোনাথন কচ্ছপ।
সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সাথে কোনো কিছু তুলনা হয় না ।
জোনাথান দ্যা টরটয়েস!
১৮৩২ সালে জন্ম। আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকলে তার বয়স হবে ১৯০ বছর। তখন জোনাথানই হবে পৃথিবীর স্থলে চরে বেড়ান সবচেয়ে বয়স্ক প্রাণী!
১৮৮২ সালে তাকে ভারত মহাসাগর থেকে সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে সে আটলান্টিক মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপ সেইন্ট হেলেনার গভর্নর হাউজের বাগানে ক্যাপ্টিভিটির মধ্যে আছে।
চোখে ছানি পড়ে যাওয়ায় কিছু দেখতে পায় না সে, ঘ্রাণ শক্তিও নেই। শুধু আছে প্রখর শ্রবণ শক্তি”।
এখানে এই প্রাণীটিকে গ্যালাপাগোস প্রজাতির একটি কচ্ছপ বলে দাবি করা হয়৷ আরো বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার তারোঙ্গা ওয়েস্টার্ন প্লেইনস (Taronga Western Plains) নামে চিড়িয়াখানায় এই কচ্ছপগুলো রয়েছে। সেখানে ছবির সূত্র হিসেবে তারোঙ্গা ওয়েস্টার্ন প্লেইনস চিড়িয়াখানার কথা উল্লেখ করা হয়।
পুনরায় অনুসন্ধানের পর, ট্রুথ আনফোল্ড (Truth Unfold) নামে একটি ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট থেকে সেই চিড়িয়াখানার অফিসিয়াল ইন্সটাগ্রাম পেজটি পাওয়া যায়। ৩০ এপ্রিল, ২০১৪ সালে তারোঙ্গা জো নামে এই পেজ থেকে ছবিটি প্রকাশিত হয়। সেখানেও কচ্ছপটি সম্পর্কে উপরোক্ত দাবিগুলোই করা হয়। ছবির বিবরণীতে এই কচ্ছপটিকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কচ্ছপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়৷
কচ্ছপটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অনুসন্ধান করা হলে বুম বাংলাদেশের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে, এএফপির বরাতে বলা হয় যে উক্ত কচ্ছপটির বয়স পঞ্চাশ বছর। পরবর্তীতে এএফপি ফ্যাক্ট চেক এর ওয়েবসাইট থেকে মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে, উপরোল্লিখিত চিড়িয়াখানার একজন মুখপাত্রের বরাতে বলা হয়, “ছবিটি একটি গ্যালাপাগোস কচ্ছপের যা ‘এ১১‘ নামে পরিচিত। কচ্ছপটির বর্তমান বয়স প্রায় পঞ্চাশ”।
অন্যদিকে, গিনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মতে জনাথন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জীবিত বয়ষ্ক স্থলজ প্রাণী। যার জন্ম হয় ১৮৩২ সালে এবং ২০২১ সালে যার বয়স ছিলো ১৮৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে সে সেইন্ট হেলেনা নামে দক্ষিণ আটলান্টিকের একটি দ্বীপে বসবাস করছে।
অর্থ্যাৎ, ভাইরাল এসব পোস্টে মূলত এই জনাথনের কথাই বলা হচ্ছে কিন্তু সেখানে ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যালাপাগোস প্রজাতির পঞ্চাশ বছর বয়ষ্ক অন্য একটি কচ্ছপের।
যদিও এসব পোস্টে জনাথনের সম্পর্কে দেওয়া তথ্যেও রয়েছে বিভ্রান্তি। সেখানে জনাথনকে পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক প্রাণি বলে দাবি করা হচ্ছে। যা সঠিক নয়। জনাথন জীবিত স্থলজ প্রাণিদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ। গিনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মতে সর্বকালের সবচেয়ে বয়স্ক প্রাণী কোয়াহগ ক্ল্যাম (Quahog Clam)।
সুতরাং, বিষয়টি পরিষ্কার যে, পৃথিবীর সবচে বয়স্ক প্রাণী দাবি করা এসব ছবি এবং এদের ক্যাপশন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?