সম্প্রতি থ্রেডসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২ মিনিট ৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ট্রাম্প জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সেই রিপোর্ট বাতিল করেছেন, যেখানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ট্রাম্পের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন বাতিলের দাবিটি সঠিক নয়। ভাইরাল ভিডিওটি গত ৪ ফেব্রুয়ারির, এতে ট্রাম্প জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে তার দেশকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছিলেন। ভিডিওটিতে ট্রাম্প বাংলাদেশ বা শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি এবং তখনও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়নি। এটি প্রকাশিত হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে থেকেই ভাইরাল ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছিল।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৮ মিনিটের সম্পূর্ণ ভিডিও প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়। এটি গত ৪ ফেব্রুয়ারি চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়। জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ (ইউএনএইচআরসি) থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার ব্যাপারে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটেও গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাহী আদেশটি প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সংস্থাটি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সুরক্ষা দিচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটির সঙ্গে নিজেদের চুক্তি নতুন করে পর্যালোচনা করছে।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প এর আগেও ২০১৮ সালের জুনে মানবাধিকার পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি মানবাধিকার পরিষদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ফিরিয়ে আনেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ৪৭ সদস্যের পরিষদে একটি আসন জেতে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনই গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র টানা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হতে চায় না।
অপর দিকে বাংলাদেশে গত বছর সংঘটিত জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার)। ১১৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠে আসে ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নে।
সে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা সরাসরি নাকচ করে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, “সেখানে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। এটা এমন একটা বিষয়- যেখানে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।” এরপর নরেন্দ্র মোদীর দিকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, স্পষ্ট করে বললে, ভারত সেখানে শতশত বছর ধরে কাজ করেছে, আর সেসব বিষয় তিনি পড়েছেন। “তবে বাংলাদেশের বিষয় আমি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেব,” বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে বলার জন্য ইশারা দেন ট্রাম্প।
এরপর নরেন্দ্র মোদী জবাব দিতে গিয়ে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরলেও বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
এসবের বাইরে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ ট্রাম্পের বাংলাদেশকে নিয়ে করা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের রিপোর্ট বাতিলের দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
Claim: সম্প্রতি থ্রেডসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২ মিনিট ৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ট্রাম্প জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সেই রিপোর্ট বাতিল করেছেন, যেখানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
Claimed By: Facebook & Threads Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh