সম্প্রতি শেখ হাসিনার দুইটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। প্রথম ছবিতে শেখ হাসিনাকে মোনাজাত করতে দেখা যাচ্ছে এবং দ্বিতীয় ছবিতে তার কপালে সিঁদুর দেখা যাচ্ছে। এই ছবি দুইটির ক্যাপশনে লেখা আছে ‘শেখ হাসিনা কি আল্লাহ কে ধোঁকা দিচ্ছে না কি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের কে ধোঁকা দিচ্ছে’? অর্থাৎ, শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে ইঙ্গিত করা হচ্ছে শেখ হাসিনা ইসলাম এবং হিন্দু এই দুই ধর্মেরই নিয়ম পালন করেন। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মোনাজাত করার ছবিটি সত্য হলেও সিঁদুর-পরা ছবিটি বিকৃত। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ভারতের ত্রিপুরা সফর করেছিলেন। সেই সফরের সময়কার শেখ হাসিনার একটি ছবিতে শেখ হাসিনার কপালে অন্য আরেক নারীর সিঁদুর পরিয়ে দেয়ার ছবি যুক্ত করে বিকৃত করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে “বিকৃত” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ভাইরাল হওয়া ছবি দুটির প্রথম ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডেইলি সানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ২৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে শেখ হাসিনার কালো বোরখা পরে মোনাজাত করার ছবিটি দেখতে পাওয়া যায়। ছবিটির উৎস হিসেবে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তথ্য অধিদফতর (পিআইডি) এর নাম উল্লেখ করা হয়। এই সূত্র ধরে পিআইডির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও ছবিটি খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। ছবিটির বর্ণনা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ছবিটি ২০১৭ সালের ২২ মে মক্কায় শেখ হাসিনার ওমরাহ হজ পালন শেষে মোনাজাত করার সময়কার।
দ্বিতীয় ছবিটিও রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করে ইন্ডিয়া টুডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে দ্বিতীয় ছবিটির উৎস হিসেবে একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ছবির সাথে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় ছবিটির মিল পাওয়া যায়।
পরবর্তিতে এই ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম The Hindu এর আওতাধীন ছবি শেয়ারিং সাইট The Hindu Images এ ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত শেখ হাসিনার একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এই একই তারিখ শেখ হাসিনা ভারতের ত্রিপুরায় দুই দিনের সফরে গিয়েছিলেন। তখন ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে গার্ড অব অনার দেয়া হয়েছিল তাকে।
এছাড়া, The Daily Star এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে আগরতলায় শেখ হাসিনার গার্ড অফ অনার নেয়ার ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
নিচের ছবি দুটো খেয়াল করে দেখলে বোঝা যাবে, ছবি দুটো একই দিনের। দুই ছবিতেই শেখ হাসিনার মুখমন্ডল, তার শাড়ির রঙ, শাড়ি পরার ধরণ, আশেপাশের লোকজন ইত্যাদি একই।
অর্থাৎ, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় ছবিটি প্রধানমন্ত্রীর আগরতলায় গার্ড অফ অনার নেয়ার সময়ের। কিন্তু সেখানে তাকে সিঁদুর পরিয়ে দেয়া হয়েছিল কি না এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় কোনো অতিথিকে গার্ড অফ অনার দেয়ার সময় সেই দেশের নির্ধারিত প্রোটোকল ছাড়া অন্য কোনো নিয়ম পালন করা হয় না। আর সিঁদুর পরিয়ে দেয়া কোনো দেশের গার্ড অফ অনারের প্রোটোকলের অন্তর্ভুক্ত নয়।
অতয়েব, নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে যে, ভারতের আগরতলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করার একটি ছবিতে অন্য আরেক নারীর সিঁদুর পরিয়ে দেয়ার ছবি যুক্ত করে বিকৃত করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে, এই ছবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিকৃত” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।