শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগাস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র এখনো প্রকাশ্যে না আসায় এ নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। এই আবহে ফেসবুকে আলোচিত পদত্যাগপত্র সম্পর্কিত একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করা হয়, “আগামী ৭ দিনের মধ্যে এই পদত্যাগপত্র জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জমা না দিলে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাতিল বলে গন্য করবে। এরপরে সেনাপ্রধান ক্ষমতা গ্রহন করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে সাংবিধানিক নিয়মে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিবেন। রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, চীন-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থনে এমন সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ।” এই তথ্যের সূত্র হিসেবে আলজাজিরার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবির সমর্থনে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আলজাজিরা শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র সম্পর্কিত এমন কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। তাছাড়া জাতিসংঘের তরফ থেকেও এমন কোনো ঘোষণার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সুতরাং ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল পোস্টগুলো মিথ্যা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র সম্পর্কিত যেই তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে তার সূত্র হিসেবে আলিজাজিরার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাই শুরুতেই এই তথ্যগুলোর সমর্থনে আলজাজিরা কোনো সংবাদ প্রকাশ করেছে কি না তা যাচাই করে দেখা হয়। আলজাজিরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর এবং জ্বালিয়ে দেওয়া, আওয়ামী লীগের অবস্থা, শেখ হাসিনার পদত্যাগে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রভাব, ইত্যাদি নিয়ে রিপোর্ট করে। কিন্তু ৭ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জমা দেওয়ার আদেশ সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই একই তথ্যযুক্ত পোস্ট কমপক্ষে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে থেকে প্রচার হয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘ যদি সত্যিই এমন কোনো আদেশ দিয়ে থাকত তাহলে তা স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যেতো।
অন্যদিকে, চলতি বছরের কমপক্ষে ১৩ মার্চ থেকে পোস্টগুলো ফেসবুকে আবার ছড়িয়ে পড়ে। এর পরের দিন গত ১৩ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং ১৬ মার্চ সকালে ঢাকা ত্যাগ করেন। গত ১৫ মার্চ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সফরের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন মহাসচিব। এখন টিভির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৫ মার্চ এই সংবাদ সম্মেলনের সম্পূর্ণ লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে জাতিসংঘ প্রধান সহযোগী হতে প্রস্তুত।
ইউএন নিউজ (UN News) এর ওয়েবসাইটে আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কিত বিস্তারিত রিপোর্ট এবং এই সংবাদ সম্মেলনের সম্পূর্ণ ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ৭ দিনের মধ্যে জমা দিতে ব্যার্থ হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাতিল করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে সাংবিধানিক নিয়মে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
Claim: আগামী ৭ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জমা না দিলে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাতিল বলে গন্য করবে।
Claimed By: Facebook users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh