যা দাবি করা হচ্ছেঃ সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী “শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন” এমন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার হতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন — এমন দাবির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় নি। ভিডিওটি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেকের। তিনি তার ভিডিও বার্তায় মূলত বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষে ভিডিও বার্তাটি দেন নি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অফিসিয়াল কোনো মাধ্যম থেকেও এমন কোনো দাবি খুঁজে পাওয়া যায় নি।
“প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে ভিডিও বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের…” এমন দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড ধরে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে ইভান স্টেফানেকের বক্তব্যের যে অংশটুকু ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৬ ডিসেম্বরে খুঁজে পাওয়া যায়।
ইভান স্টেফানেক একজন রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের পক্ষে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের একজন সদস্য। তিনি ২০১৪ ও ২০১৯ সালে ইউরোপীয় সংসদীয় নির্বাচনে ইউরোপীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও ২০০৬ সালে তিনি স্লোভাক প্রজাতন্ত্রের জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য হন। তবে স্টেফানেকের সাথে মার্কিন দূতাবাসের কোনো সম্পর্কের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
সেই ভিডিওতে ইভান স্টেফানেক বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”। উক্ত ভিডিওতে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমনটি বিশ্বাস করে না। তাই তিনি শেখ হাসিনাকে বর্তমান সরকার ব্যবস্থা থেকে সরে গিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তিনি উক্ত ভিডিওতে বলছেন “…আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন” অর্থ্যাৎ, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত মতামত দিচ্ছেন। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না।
পুনরায় অনুসন্ধানে, বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি সংক্রান্ত কোনো ধরণের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি। মার্কিন দূতাবাস কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটি তাদের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়ার কথা।
এছাড়াও, মূলধারার দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যহত করবেন এমন ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেয়া সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়।
সুতরাং, ফেসবুকে শেয়ারকৃত ভিডিওটি থেকে তার দাবির সপক্ষে কোনো ধরনের যথার্থ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভিডিওর দাবিটিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।