যা দাবি করা হয়েছে: কোনো একজন হিন্দু ছেলে পাত্রভর্তি মিষ্টির উপরে প্রস্রাব করছে। যেই দোকানে এই ঘটনা ঘটেছে সেই দোকানের মালিক কোনো একজন হিন্দু ব্যক্তি। তাই মুসলিমদের উচিত হিন্দুদের দোকান থেকে মিষ্টি না কিনে মুসলিমদের দোকান থেকে কেনা।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে যথার্থ কারণে এই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা চিহ্নিত করেছে।
কারণগুলো হলো-
১। এই ভিডিও বিনোদন বা ভাইরাল উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বানানো হয়েছে। সত্যিকার অর্থে পাত্রে থাকা মিষ্টির উপরে প্রস্রাব করা হয়নি।
২। ভিডিওটি প্রথমে যখন ভাইরাল হয়েছিল সেখানে দাবি করা হয়েছিল ছেলেটি মিষ্টির উপরে প্রস্রাব করছে। এরপরে ভারতের একজন রাজনীতিবিদ দাবি করেন মুসলিম ছেলে মিষ্টির উপরে প্রস্রাব করে হিন্দুদের উপরে জিহাদ বা সে জাতীয় কিছুর নিদর্শন দিচ্ছে। বাংলাদেশে যখন ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তখন দাবি করা হলো একজন হিন্দু ছেলে পাত্র ভর্তি মিষ্টির উপরে প্রস্রাব করেছে।
৩। ভাইরাল ভিডিওর মূল ভিডিও পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে একটি ছেলে তার গোপনাঙ্গের স্থলে একটা বোতল ধরে রেখেছে। সেই বোতল থেকে মিষ্টির পাত্রে তরল জাতীয় কিছু পড়ছে। পেছন থেকে ক্যামেরা ধরায় ভিডিও দেখে বোঝার উপায় নেই যে, গোপনাঙ্গের জায়গায় বোতল রাখা আছে। বরং মনে হয়েছে, ছেলেটি মিষ্টির উপরে প্রস্রাব করছে!
৪। আন্তর্জাতিক একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সাইট প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভাইরাল ভিডিওটি যে প্রাংক ভিডিও তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে।
ফেসবুক ভাইরাল এমন কিছু লিংক বাছাই করা হয়েছে। যা দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ যেভাবে জানলো এটি সত্য কোনো ঘটনার ভিডিও নয়
প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করা হয়। সেখান থেকে ঠিক এ বিষয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং সাইট bangla.aajtak,
the quint, factcrescendo এবং FACTLY থেকেও যা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, the quint থেকে ৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে এবং FACTLY থেকে ৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে দাবি ছিলো কেউ মিষ্টির পাত্রে প্রস্রাব করছে।
তবে ২০২৪ সালের মে মাসে এই ভিডিওটি বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতি জাতীয় ক্যাপশনে ভাইরাল হয়েছে। সুনিদিষ্ট করে বলা হচ্ছে এটি কোনো হিন্দুর দোকান, এবং প্রস্রাব করা ছেলেটিও হিন্দু। যদিও ভাইরাল ভিডিওর মূল ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে প্রস্রাব করার মতো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। সবকিছুই ছিলো পূর্বপরিকল্পিত, অর্থাত্ এটি প্রাংক বা বিনোদন ভিডিও।
বলাবাহুল্য, যারা এমন ভিডিও তৈরি করেছেন তাদের ধর্মপরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। যে দোকানে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তার ঠিকানাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ২০২২ থেকে ২০২৪ অব্দি ভারত থেকে যথাক্রমে যেই ভিডিও বাংলাদেশে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে তা সত্য কোনো ভিডিও নয়। তাই এমন ভিডিওগুলোর দাবি ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।