ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক দেশেই সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। এই ঘটনাটি ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন ট্রাম্প কেবল বাংলাদেশেই সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করেছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের যে ঘোষনা দিয়েছে সেটি প্রায় সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। এমনকি ভারতও এই স্থগিতাদেশের আওতায় রয়েছে এবং ভারতের সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, দেশটির বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমও এই স্থগিতের ঘোষণায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এ ছাড়া অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের এই ঘোষণা কেবল জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের জন্য সামরিক তহবিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। দেশটির ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ নথিতে এই তথ্য জানা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহের সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এরপরই এই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। ফাঁস হওয়া এই নথি অনুযায়ী, আগামী ৯০ দিনের জন্য সব মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
একই তথ্য জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন থেকেও। গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, শুধুমাত্র জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের জন্য বিদেশি সামরিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। নথিতে ইউক্রেন বা তাইওয়ানের মতো অন্যান্য দেশ, যারা বিদেশি সামরিক অর্থায়ন পেয়ে থাকে, তাদের নিয়ে এই স্থগিতাদেশ থেকে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবেদনগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা বাংলাদেশসহ সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য, এই স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে কেবল জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশর। কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামের উপস্থাপন এমন যে, যুক্তরাষ্ট্র কেবল বাংলাদেশেই সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করেছে।
যেমন, জি নিউজ লিখেছে, ‘বাংলাদেশকে সব আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিলেন ট্রাম্প, ঘোর বিপাকে ইউনূস সরকার’, আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন লিখেছে, ‘বাংলাদেশকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিল আমেরিকা! নতুন চাপে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার’, এবিপি আনন্দ লিখেছে, ‘বাংলাদেশকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ আমেরিকার, আরও বিপাকে ইউনূস সরকার’।
আবার ভারতের বাংলা ভাষী একটি নিউজ পোর্টাল নজরবন্দী দাবি করেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাশুল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের এই ঘোষণায় ভারতের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবর, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সব অংশীজনকে চলমান সব প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিত করার যে নির্দেশ দিয়েছে, সেটির প্রভাব পড়বে ভারতের বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও।
দেশটির আরেকটি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতের এই ঘোষণা ভারতে দেশটির দূতাবাস ও ইউএসএআইডির পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর ওপর প্রভাব ফেলবে।
সার্বিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৈশ্বিক সিদ্ধান্তকে কেবল বাংলাদেশ কেন্দ্রিক শিরোনাম দিয়ে প্রচার করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। ফলে ফ্যাক্টওয়াচ এসব পোস্টকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো দেখুন জি২৪, এই সময়, আনন্দ বাজার পত্রিকা অনলাইন, এবিপি আনন্দ, নিউজ ১৮ বাংলা, রিপাবলিক বাংলা, নজরবন্দী।
Claim: ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক দেশেই সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। এই ঘটনাটি ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন ট্রাম্প কেবল বাংলাদেশেই সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করেছে।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh