বাংলাদেশে কোন আন্দোলন এবং সংকটের সময়ে ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়। অনুরোধকারীদের দাবি, ফেসবুক পোস্টে এবং কমেন্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে তা বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। মাঝেমধ্যে এক বা একাধিক পোস্টের জন্য কোন একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়।
যেমন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কিভাবে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে হবে তার একটি দিক নির্দেশনা দিয়ে Touhidul Islam নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি পোস্ট করেছেন। তিনি #SaveBangladeshiStudents এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পোস্ট করতে বলেছেন। তিনি হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের নিয়ম-কানুনও বর্ণনা করেছেন। পরিশেষে তিনি উক্ত হ্যাশট্যাগে ১০ লাখ পোস্টের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন।
ফ্যাক্টওয়াচের এই ফ্যাক্টফাইলে জানার চেষ্টা করা হবে হ্যাশট্যাগ আসলে কতটা কার্যকরী।
হ্যাশট্যাগ কি?
মেটার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের একটি ব্লগে বলা হচ্ছে পোস্টে থাকা হ্যাশট্যাগ কোন টপিক এবং বাক্যংশকে ক্লিকযোগ্য লিংকে পরিণত করে। যখন ব্যবহারকারী হ্যাশট্যাগে ক্লিক করে অথবা হ্যাশট্যাগ অনুসন্ধান করে তখন তারা হ্যাশট্যাগ সম্পকৃত পোস্টগুলো দেখতে পারে।
ব্যাপারটাকে আরেকটু সহজভাবে বলা যায় হ্যাশট্যাগ হচ্ছে পোস্টে থাকা ক্লিক করার মতো লিংক।কোন হ্যাশট্যাগে ক্লিক করলে বা ফেসবুকে অনুসন্ধান করলে যেসব পোস্টে উক্ত হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে পোস্টগুলো ফিডে প্রদর্শিত হয়।
হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের জন্য কোন শব্দের শুরুতে হ্যাশ (#) চিহ্ন ব্যবহার করলেই হয়। ফেসবুকের হেল্প সেন্টারের একটি ব্লগ থেকে হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মনে রাখতে বলা হয়ছে।
হ্যাশট্যাগ কোন স্পেস ব্যবহার না করে একটি শব্দে লিখতে হবে।
যত ইচ্ছে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা যাবে, তবে যতিচিহ্ন ব্যবহার করা যাবে না।
যেকোন পেজের উপরে থাকা সার্চ বারে হ্যাশট্যাগ অনুসন্ধান করা যায়।
আপনার সাথে শেয়ার করা পোস্টগুলো শুধু আপনি দেখতে পারবেন। ( অর্থাৎ, যেসকল পোস্টের প্রাইভেসি সেটিংস পাবলিক নয়, বা আপনি তাঁর ফ্রেন্ডলিস্টে নাই, সেসকল পোস্ট দেখা যাবেনা)
বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ফেসবুকে #copaamerica লিখে সার্চ দিতে এই হ্যাশযুক্ত অনেকগুলো পোস্ট চলে এলো। একইসাথে জানা গেল, ফেসবুকে ২.২ মিলিয়ন (২২লাখ)মানুষ এই হ্যাশট্যাগযুক্ত পোস্ট করেছে, এবং ১১হজার মানুষ এই হ্যাশট্যাগ ফলো করেন।
রংপুরে সম্প্রতি নিহত আবু সাঈদের নাম হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখে সার্চ করে দেখা গেল, ফেসবুকে ১৫ হাজার ব্যবহারকারী আবু সাঈদ হ্যাশট্যাগ সহ পোস্ট করেছে। এসকল পোস্টে ক্লিক করে দেখা গেল, প্রতিটা পোস্টের প্রথমে অথবা শেষে, বা পোস্টের অন্য কোথাও উক্ত হ্যাশট্যাগটা রয়েছে। তবে কমেন্ট বক্সে হ্যাশট্যাগের কারণে এই হ্যাশট্যাগ সার্চে কোনো পোস্ট পাওয়া গেল না।
অর্থাৎ, এটা প্রমাণিত হয় যে, কমেন্টে হ্যাশট্যাগযুক্ত কোনো শব্দ/বাক্যাংশ লিখলে সেটা হ্যাশযুক্ত মূল পোস্টের মতই একইসাথে প্রদর্শিত হবে না। অন্য কথায়, কমেন্ট বক্সে হ্যাশট্যাগযুক্ত শব্দ লিখলে, উক্ত পোস্টে কমেন্ট সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপকারিতা নেই।
এক্স এ (সাবেক টুইটারে) যেকোনো ইউজার আইডি থেকে লগইন করলে হোমপেজের ডানপাশে অনেকগুলো ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ দেখা যায়, এবং প্রতিটা হ্যাশট্যাগের সংখ্যাও দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে টুইটার ব্যবহারকারীরা যেসব হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পোস্ট লিখছেন, সেগুলোই দেখা যায় এই তালিকায়। কারো নিউজফিডের ট্রেন্ডিং এ অজানা কোনো হ্যাশট্যাগ দেখতে পেলে কৌতুহলী হয়ে সে ওই হ্যাশট্যাগে ক্লিক করলে এ সংক্রান্ত পোস্টগুলো দেখতে পারে। এভাবে একটা ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ আরো বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌছাতে পারে।
স্ক্রিনশট : একজন টুইটার ব্যবহারকারীর হোমপেজ। ডানপাশে ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগগুলো দেখা যাচ্ছে।
তবে ফেসবুকের হোমপেজে এ ধরনের ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগসমূহ দেখা যায় না। ফলে ফেসবুকে অধিক হ্যাশট্যাগ পোস্ট করলে কোনো হ্যাশট্যাগের ট্রেন্ডিং এ চলে আসার , বা অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
স্ক্রিনশট : একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর হোমপেজ। এখানে কোথাও কোনো ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগের তালিকা দেখা যাচ্ছেনা
TRUST INSIGHTS নামক একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে ফেসবুক পোস্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে তা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় কিনা তা জানার জন্য ২০১৯ সালে তা্রা একটি অনুসন্ধান শুরু করে। তারা ৬ ই জানুয়ারির থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০৯৬৩ ফেসবুক পেজ থেকে ১,৭৯৯,৩৫৫ টি পোস্ট সংগ্রহ করে। এই পেজগুলোর ফলোয়ারের মধ্যক সংখ্যা ছিলো ২১৩,১৪৮। তারা Crowdtangle নামক একটি নজরদারি কোম্পানির সুপারিশকৃত শীর্ষ পেজগুলো এ কাজের জন্য বাছাই করে।
প্রতি পোস্টে গড়ে ০.২৫৭৭ , মধ্যক ০ এবং সর্বোচ্চ ১২৪ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়।
প্রাপ্ত ডাটাসেটে তারা গ্রাডিয়ান্ট বুস্টিং ম্যাশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক পোস্টের রিচ সব থেকে বেশি নির্ভর করে পোস্টের দৈর্ঘ্যের উপর। তার পরের অবস্থানগুলো যথাক্রমে শেয়ার, হাহা রিয়াকশন এবং লাইক রিয়াকশনের। তবে এখানে হ্যাশট্যাগের ভূমিকা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।
তাই TRUST INSIGHTS তাদের পরিসমাপ্তিতে বলেছে হ্যাশট্যাগ কোন ক্ষতি করে না, তবে ফেসবুকের রিচ পেতে কোন ধরণের সহায়তাও করে না।
তারা উপসংহার টেনেছে এভাবে যে, হ্যাশট্যাগ হচ্ছে অনেকটা বাক্সের মতো। প্রতিটা হ্যাশট্যাগ একেকটা বাক্স। কোন পোস্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে সেই পোস্ট সেই হ্যাশট্যাগ বাক্সে চলে যাবে। একটা পোস্টে যতগুলো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হবে সেই পোস্ট ততগুলো হ্যাশট্যাগ বাক্সে থাকবে। এভাবে হ্যাশট্যাগ বাক্সে পোস্টের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তবে কমেন্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে তা হ্যাশট্যাগ বাক্সে গণনা হবে না। টুইটারের মতো ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ব্যবহারে তেমন কার্যকারিতা নেই। কারণ টুইটারে হ্যাশট্যাগের ট্রেন্ডিং হয়। এতে ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারে টুইটারে এখন কোন টপিক নিয়ে সব থেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে। তবে ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং এর মতো এমন কোন ব্যবস্থা নেই।
সারমর্ম
১। ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে হ্যাশট্যাগযুক্ত ব্যাক্যাংশ পোস্ট করলে সেটা কেবলমাত্র একটা নতুন কমেন্ট যোগ করে। এর আর কোনো ভূমিকা নেই
২। ফেসবুকে কোনো পোস্টে হ্যাশট্যাগ যুক্ত করলে, উক্ত হ্যাশট্যাগ ক্লিক করার মাধ্যমে একই হ্যাশট্যাগ যুক্ত অন্যান্য পোস্ট দেখা যাবে। এবং মোট কতজন ফেসবুক ব্যবহারকারী উক্ত হ্যাশট্যাগ যুক্ত পোস্ট করেছেন, সেই সংখ্যাটা জানা যাবে।
৩। এক্স (টুইটারে) প্রতিদিনের শীর্ষ হ্যাশট্যাগসমূহ যেকোনো টুইটার ব্যবহারকারীর নিউজফিডে ‘ট্রেন্ডিং’ হিসেবে দেখানো হয়। তবে ফেসবুকে এ ধরনের কোনো ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ দেখানোর চল নেই। তাই বেশি মানুষের কাছে দ্রুত পৌছানোর জন্য ফেসবুকের চেয়ে টুইটারে হ্যাশট্যাগ বেশি কার্যকরী।