কোভিড–১৯ টিকা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী – গবেষণায় কি এমন কোনো প্রমাণ মিলেছে?

93
কোভিড–১৯ টিকা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী – গবেষণায় কি এমন কোনো প্রমাণ মিলেছে?
কোভিড–১৯ টিকা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী – গবেষণায় কি এমন কোনো প্রমাণ মিলেছে?

Published on: [post_published]

৭ জুলাই ২০২১ তারিখে কানাডিয়ান চিকিত্সক চার্লস হফ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি ভিডিও ক্লিপে দাবি করেছিলেন যে, যারা কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেছেন তাদের বেশীরভাগই রক্ত ​​জমাট বাঁধার সমস্যা অনুভব করবেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে চিকিত্সক হফের এই বিশ্লেষণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, পিয়ার-রিভিউ (বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি) করা হয়নি এবং কোভিড–১৯ টিকা নিলে রক্ত জমাট বাঁধে এমনটি প্রমাণ করে না।

বাংলাদেশেও চিকিত্সক চার্লস হফের উক্ত তথ্যটি ফেসবুকে কেউ কেউ শেয়ার করছেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।

৭ জুলাই ২০২১ তারিখে ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে চার্লস হফ দাবি করেছেন যে, এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরিকৃত কোভিড-১৯ টিকা দ্বারা উদ্ভূত স্পাইক প্রোটিনগুলো “আণুবীক্ষণিক” ভাবে রক্ত ​​জমাট বাঁধতে এবং তা ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করবে যা টিস্যুর স্থায়ী ক্ষতি করবে। মূল ভিডিওটি ডিলিট করা হলেও অন্য একটি মাধ্যমে ভিডিওটি দেখুন এখানে।

হফ দাবি করেছেন স্ক্যান রিপোর্টে দেখানোর জন্য জমাটটি খুব ছোট, কিন্তু তিনি ডি-ডাইমার নামক পদার্থের মাত্রার ওপর নির্ভর করে রক্ত ​​পরীক্ষায় জমাটগুলো সনাক্ত করেছেন, যা জমাট বাঁধার লক্ষণ বুঝতে ব্যবহৃত হয়।

উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো নিশ্চিত করে যে কোভিড-১৯ এর টিকা বেশ নিরাপদ। যদিও তাদের কেউ কেউ স্বীকার করেন যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ টিকা নেবার পর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে। তবে সেগুলো ভিন্ন প্রযুক্তিতে তৈরি টিকা, এমআরএনএ প্রযুক্তির নয়।

হফ তার ভিডিওতে বলেছেন, “আমি আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার কাছে যা আছে, তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশের জমাট বাঁধার প্রমাণ রয়েছে, যার মানে এই রক্ত ​​জমাট বিরল নয়। এর মানে  বেশিরভাগ মানুষ রক্ত ​​জমাট বাঁধছে এবং তাদের এ বিষয়ে কোন ধারণা নেই।“

তবে বিশেষজ্ঞরা এএফপিকে বলেছেন যে, উচ্চতর ডি-ডাইমার মাত্রা রক্তের জমাট বাঁধার প্রমাণ নয়। রক্ত জমাট বাঁধার সন্দেহ হলে বিশেষজ্ঞের দ্বারা একটি ডি-ডাইমার পরীক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু টিকা দেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার ডি-ডাইমার স্তর উদ্বেগজনক নয়।

ফ্রেঞ্চ সোসাইটি অফ ভাস্কুলার মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট মারি-অ্যান্টোয়েনেট সেভেস্ত্রে-পিয়েট্রি জুলাইয়ে বলেন, “যখন আপনাকে টিকা দেওয়া হয়, তখন প্রায়ই প্রদাহ হয়: আপনার সামান্য জ্বর, ব্যথা এবং ব্যথা হয়। এটা প্রমাণ করে যে ভ্যাকসিন কাজ করছে। পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফলে ডি-ডাইমার স্তর বাড়তে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাতে রক্তের ঘনীভবন ঘটবে।“

প্যারিসের জর্জেস-পম্পিডো হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের একজন চিকিত্সক ডাঃ নিকোলাস গেনড্রন বলেন,

“উচ্চ ডি-ডাইমার স্তর থাকার মানে এই নয় যে আপনার থ্রম্বোসিস (হৃৎপিণ্ডে বা রক্তনালীতে রক্ত ​​জমাট বাঁধা) হয়েছে। এটি নিশ্চিত হতে অতিরিক্ত পরীক্ষা, যেমন সিটি স্ক্যান প্রয়োজন হবে।“

ফ্রেঞ্চ সোসাইটি অফ হেমাটোলজি বলছে, ডি-ডাইমারের মাত্রা বয়সের সাথে বৃদ্ধি পায়, গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এবং অনেক রোগগত পরিস্থিতিতে যেমন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ ক্ষেত্রে।

অপ্রকাশিত, যাচাইহীন গবেষণা

হফের দাবি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েছিলেন যে তিনি তার সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য যে প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করেছিলেন তা তিনি বর্ণনা করেননি এবং তার ফলাফলগুলো সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়নি।

ফ্রেঞ্চ সোসাইটি অফ হেমাটোলজি বলেছে, “চিকিৎসক হফের পরীক্ষাটি কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা নয় এবং এটি ‘প্রমাণ-ভিত্তিক ওষুধ’ ক্যাটাগরিতে পড়ে না। অতএব, এই গবেষণার জন্য কোন কৃতিত্ব দেওয়া যাবে না।“

সেভেস্ত্রে-পিয়েট্রি এ বিষয়ে একমত হয়ে বলেছেন, “আমরা জানি না যে তিনি কীভাবে তার রোগীদের মধ্যে নমুনা বাছাই করেছেন, যদি তিনি তার গবেষণায় ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ছয়জন রোগী নেন, তবে তাদের অবশ্যই উচ্চ ডি-ডাইমার স্তর থাকবে। কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে এই গবেষনায় তা জানা যায়নি এবং গবেষণার ফলাফল কোথাও প্রকাশিত হয় নি।“

কানাডিয়ান এই ডাক্তারের দাবির বিপরীতে, গতবছরের জুনে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা ফাইজার-বায়োনটেক এর ভ্যাকসিন পেয়েছেন, যেগুলোতে মডার্নার মতো এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত টিকাগুলোর গবেষণাকালে টিকা নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে থ্রম্বোসিসের (হৃৎপিণ্ডে বা রক্তনালীতে রক্ত ​​জমাট বাঁধা) লক্ষণ দেখা যায়নি।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো ভাইরাল ভেক্টর প্রযুক্তিতে তৈরি টিকা গ্রহণে রক্ত ​​​​জমাট বাঁধার ঘটনা পাওয়া গেছে, যদিও সংখ্যায় খুব তা খুবই নগণ্য। এর বিপরীতে এমআরএনএ প্রযুক্তিটি কিছুটা ভিন্ন। এটি নিরাপদ ভাইরাসের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ ব্যবহার করে, যা দেহের কোষগুলিতে নির্দেশনা সরবরাহ করে যা তাদের করোনভাইরাসের সাথে লড়াই করতে সক্ষম করে তোলে।

রক্ত ​​জমাট বাঁধার ঘটনার পর কিছু দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন এন্ড জনসন টিকা ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি আবার চালু হয়েছে।

কানাডিয়ান ফেডারেল সরকার এখন পর্যন্ত চারটি টিকা অনুমোদন করেছে: মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (এমআরএনএ) প্রযুক্তির টিকা ফাইজার-বায়োনটেক এবং মডার্না, ভাইরাল ভেক্টর প্রযুক্তির দুটি টিকা অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন এন্ড জনসন।

এ বিষয়ে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
মূল লেখা: Testing by Canadian doctor does not prove Covid-19 shots cause clots

লেখক: জুলিয়েট মনসুর

অনুবাদক: আপন দাস

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.