সম্প্রতি ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি মসজিদ থেকে আজান দেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, এটা গত ৮ সেপ্টেম্বর মরক্কোতে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি মসজিদ থেকে আজান দেয়ার দৃশ্য। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, এটা মরক্কোর ভূমিকম্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ভিডিও নয় এবং মসজিদটি মরক্কোতেও অবস্থিত নয়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমপক্ষে ছয় বছর আগে থেকে ভিডিওটির উপস্থিতি দেখা যায়, যেখানে মসজিদটির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সিরিয়ার আলেপ্পোতে রাশিয়ার বিমান হামলাকে দায়ী করা হয়। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সত্যিই মরক্কোর কি না এ ব্যাপারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে Dr.A R Anjaria নামের একজন রাজনীতিবিদের ফেসবুক পেইজ থেকে ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয় যে, সিরিয়ায় অবস্থিত মসজিদটি রাশিয়ার বিমান হামলার কবলে পড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এছাড়াও, হায়ান মিডিয়া অফিস নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে ২০১৭ সালের ১১ জুন আপলোড করা একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয় মসজিদটি সিরিয়ার উত্তর আলেপ্পোর একটি গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত।
পরবর্তিতে, ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে مركزحلبالإعلامي (Aleppo Media Center) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদটির ভিন্ন আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে অন্য এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে আযান দিতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী এটা রাশিয়ার বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আলেপ্পোর হায়ান শহরের শেখ কাসিম জামে মসজিদের জোহরের আযানের সময়কার ভিডিও।
এই ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের সাথে ভাইরাল হওয়া মসজিদের বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। নিচের ছবি দুটো খেয়াল করে দেখলে বোঝা যাবে, ছবি দুটো একই স্থানের। দুই ছবিতেই মসজিদের মিনারের রং, মিনারের ভাঙ্গা কংক্রিটের অংশ, মসজিদের পাশের সিঁড়ি, পিলার ইত্যাদি একই।
এছাড়াও টিআরটি ওয়ার্ল্ডের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে “মসজিদ ও স্কুল লক্ষ্য করে রাশিয়ার বিমান হামলা (বাংলা অনুবাদ)” শিরোনামে ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও আলেপ্পোর হায়ান এলাকার শেখ কাসিম জামে মসজিদ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, আলেপ্পোর যুদ্ধ ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালে পর্যন্ত চলমান ছিল। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি সেনা, রাশিয়া, ইরান এবং আঞ্চলিক শিয়া মিলিশিয়াদের সামরিক জোটের বিজয়ের মাধ্যমে এই যুদ্ধ শেষ হয়। ২০১৬ সালে সর্বশেষ রাশিয়ার বিমান হামলার মাধ্যমে সিরিয়ার সরকারি সেনারা বিদ্রোহীদের দখলে থাকা আলেপ্পোর এলাকাগুলোর ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। আলেপ্পোই ছিল সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি।
অন্যদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর মরক্কোর মারাকেশ-সাফি অঞ্চলে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরে ২৯০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায় এবং কমপক্ষে ৫৫০০ জন আহত হয়। কিন্তু এই ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি মসজিদ থেকে আজান দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ভিডিওটি কমপক্ষে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়। সুতরাং নিশ্চিত ভাবেই এটি মরক্কোর ভূমিকম্পের সাথে সম্পর্কিত কোনো ভিডিও নয়।
অতএব, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এই দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।