তামিম-মিরাজের ভাইরাল ফোনকলটি নগদ-এর প্রচারণার  অংশ ছিল

26
তামিম-মিরাজের ভাইরাল ফোনকলটি নগদ-এর প্রচারণার  অংশ ছিল তামিম-মিরাজের ভাইরাল ফোনকলটি নগদ-এর প্রচারণার  অংশ ছিল

Published on: [post_published]

গত ১৯ মার্চ ২০২৪ এ রাত ১০ টা ২৭ মিনিটে স্পোর্টস বুলেটিন ‘খেলাযোগ’ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে “এক সিনিয়র ক্রিকেটারের চাঞ্চল্যকর ফোনালাপ ফাঁস। এটা কি কোনো কারসাজি নাকি ঘটনা সত্য? খেলাযোগের হাতে এসেছে… #tamim #shakib #ban_cricket” – শীর্ষক একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই সেটি সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা এবং সমালোচনার সৃষ্টি করে। আলোচিত ভিডিওটিতে ক্রিকেটার তামিম ইকবাল এবং মেহেদি হাসান মিরাজের ফোনকলে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং শুনতে পাওয়া গেছে। অনেকেই এটিকে ফাঁস হওয়া ফোনকল ভেবে শেয়ার করেছেন। এদিকে, ২০ মার্চ ২০২৪ এ সকাল ১১ টা দুই মিনিটে তামিম ইকবাল তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করে জানিয়েছেন যে, তিনি সন্ধ্যা সাতটায় ফেসবুক লাইভে এসে ভাইরাল হওয়া ফোনকলটি নিয়ে কথা বলবেন। ২০ মার্চ ২০২৪ এ সন্ধ্যা ছয়টা ৫৯ মিনিটে শুরু হওয়া একটি লাইভে তামিম ইকবাল ছাড়াও মেহেদি হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ – এই তিনজন ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন। উক্ত লাইভের এক পর্যায়ে তামিম ইকবাল আলোচিত ফোনকলটির ব্যাপারে খোলাসা করে জানিয়েছে যে, এটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ‘নগদ’ এর একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের অংশ ছিলো। পরবর্তীতে আমরা ঐ লাইভে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মিশুককে যুক্ত হতে দেখি, যিনি তামিম ইকবালের ভাষ্যমতে উক্ত মার্কেটিং ক্যাম্পেইনটির পরিকল্পনাকারী ছিলেন। এরপর তানভীর মিশুক নগদের পুরো মার্কেটিং ক্যাম্পেইনটি বিস্তারিত বর্ণনা করেন। যেহেতু খেলাযোগ আলোচিত ফোনকলটিকে একটি এক্সক্লুসিভ নিউজ হিসেবে প্রচার করেছে এবং নিউজের কোথাও এটি যে একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের অংশ – সেটি উল্লেখ করেনি, সেহেতু অনেক সাধারণ মানুষ উক্ত নিউজটিকে সত্য ভেবে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ খেলাযোগ কর্তৃক প্রকাশিত নিউজের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

‘খেলাযোগ’ কর্তৃক প্রকাশিত তামিম ইকবাল এবং মেহেদি হাসান মিরাজের ফোনকলের অডিও রেকর্ডিংটির প্রথম অংশে তামিম মিরাজকে বলছেন, “এখন তোদের সাথে খেলি না তো ন্যাশনাল টিমে এখন অনেকের অনেক ভাবটাব বেড়ে গেসে। এটা হইলো সমস্যা ঠিক আছে? কারণ হইলো যখন তোদের সাথে খেলতাম, ক্যাপ্টেন থাকলে তো এরকম আর তোরা করতে পারতি না। এখন আমার দাম নাই। দাম কমে যাচ্ছে দেখে তোরা এই সব করতেসস!” এর পরপরই একজন ন্যারেটরের কন্ঠে শোনা যায়, “কী হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে? কেন তামিম আবার ক্ষেপে উঠেছেন তেলেবেগুনে? মনের সব ক্ষোভ ঝেড়ে দিয়েছেন কার কাছে? তামিম ইকবাল আর মেহেদি হাসান মিরাজের চাঞ্চল্যকর অডিও কল রেকর্ড খেলাযোগের হাতে। বন্ধুত্বের মাঝে দেয়াল। সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বের কথা ক্রিকেট দুনিয়া জানে। কেবা নতুন করে বিরোধ তৈরি করলেন তামিমের সাথে!” ফোনকল রেকর্ডিংটির পরবর্তী অংশ শুনে বুঝা গেছে যে, তামিম মুশফিকুর রহিমের উপর কিছুটা বিরক্ত কেননা সে তামিমের সাথে কোন কথা না বলে অন্য একটা টিম তৈরি করতে যাচ্ছে! আলোচিত ফোনকলটি শুনে অনেকেই এটিকে ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং ভেবে নিয়ে তামিম ইকবালের পূর্বের বিভিন্ন কীর্তি সামনে এনে তাঁর সমালোচনা করেছেন। 

তবে, ভাইরাল হওয়া আলোচিত-সমালোচিত এই ফোনকলটি নিয়ে কথা বলতে ২০ মার্চ ২০২৪ এ সন্ধ্যা সাতটায় একটি লাইভে আসার ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। তিনি তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ২০ মার্চ সকাল ১১ টা দুই মিনিটে একটি পোস্ট শেয়ার করে এই বার্তা দেন। 

এরপর ২০ মার্চ ২০২৪ এ সন্ধ্যা ছয়টা ৫৯ মিনিটে তামিম ইকবাল তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসেন। সেখানে তামিম ছাড়াও মেহেদি হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এবং মুশফিকুর রহিম – এই তিন ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন। উক্ত লাইভে যখন মুশফিকুর রহিম যোগ দেন তখন তামিম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোরে আমি কইছি যে একসাথে খেলবো, সব করবো। তুই আবার অন্য টিম বানাইতে গেছোস কেন?” তখন জবাবে মুশফিকুর রহিম বলেন, আজাইরা আলাপ করে লাভ নাই। যেইটা আসল কাহিনী সেই কাহিনীটা বল।” এরপর তামিম ইকবাল একটু হেসে ফিরতি জবাবে বলেন, “যেইটা আসল কাহিনী আমি বলি। এবার ঈদে নগদের যে ক্যাম্পেইন যেখানে ২৪ জন গ্রাহক ঢাকা শহরে জমি পাবে। বাট এখানে ছোট্ট একটা রুল আছে। এই মিরাজ শোন। তোর তো জমির নেশা। ছোট্ট একটা রুল আছে। সবাইকে দুইজন করে টিম করতে হবে, যারা তিনজন করে টিম বানাবে। আর এই মুশফিক আমার টিম ছাইড়া অন্য টিমে চলে গেছে। বুঝছস মিরাজ, এটা নিয়া পুরা কাহিনীটা! আর সবচেয়ে মজার বিষয় হইলো এই পুরা নাটকটা যে সাজাইছে যে ব্যক্তি, আর আমাকে দিয়ে যে নাটকটা করাইছে তাকে আমরা ইনভাইট করি। তার মুখে শুনি যে এই কাজটা কি কারণে করাইছে…” তখন ঐ লাইভে যোগ দেন মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসেস ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মিশুক, যিনি উক্ত মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনাকারী ছিলেন। 

পরবর্তীতে তানভীর মিশুক নগদের মার্কেটিং ক্যাম্পেইনটি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন, নগদ তো সবসময় চমক নিয়ে আসে। আপনারা জানেননই। গতবার যেমন একটা বিএমডব্লিউ দিয়েছে। একজন পেয়েছে। তো সেটা নিয়েই তো সারা বাংলাদেশে একটা হইচই পড়ে গিয়েছিল। বাট এইবার আসলে নগদ নিয়ে আসছে এমন একটা জিনিস যেটা আসলে একজন উইনার হবে না। উইনার হবে লাখ লাখ মানুষ। এরমধ্যে প্রথম (অস্পষ্ট বাক্য) ২৪ জন মানুষ ঢাকায় জমি পাবে নগদ থেকে। প্লাস নগদের যারা পার্টনার আছে, মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, তারপর পেমেন্ট মার্চেন্ট সবাই মিলে নগদের গ্রাহকের জন্য ২০ কোটি টাকা ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, কুপন, এবং বিভিন্ন গিফট নিয়ে আসছে।…তো নগদ গতবারের লেভেলটাকে এবার ডাবল করছে।” এরপর লাইভে উপস্থিত সবাই নগদের এই ক্যাম্পেইনটিতে কিভাবে জমি পাওয়া যাবে সেটি নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ করেন। 

তামিম-মুশফিক-মিরাজ-রিয়াদের উক্ত লাইভটি নিয়ে ঢাকা পোস্ট একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। সেটি পড়ুন এখানে। 

অতএব, উপরের পুরো আলোচনা থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, ‘খেলাযোগ’ তামিম এবং মিরাজের ফোনকলের যে অডিও রেকর্ডিংটি প্রকাশ করেছে সেটি আসলে পূর্বপরিকল্পিত এবং নগদের একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের অংশ ছিলো। যেহেতু খেলাযোগ অডিও রেকর্ডিংটিকে একটি এক্সক্লুসিভ নিউজ হিসেবে প্রচার করেছে এবং আলোচিত কল রেকর্ডিংটি যে নগদের মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের অংশ ছিলো সেটি নিউজে উল্লেখ করেনি, সেহেতু অনেক সাধারণ ব্যবহারকারী নিউজটি দেখে বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং শেয়ার করেছেন।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা সাপেক্ষে ফ্যাক্টওয়াচ খেলাযোগের উক্ত নিউজের দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.