Published on: August 11, 2020
![]() সম্প্রতি বেশ কিছু ফেসবুক পোস্ট এবং অনলাইন পোর্টালে ‘কামরাঙ্গার বিষ ডেকে আনে মৃত্যু’ এবং ‘কামরাঙ্গা ফলের ক্ষতিকর দিক’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে, যেখানে ফলটি পুরোপুরি বর্জন করতে বলা হচ্ছে। গবেষণালব্ধ তথ্য ও চিকিৎসকদের নির্দেশনা বলছে ফলটি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ক্ষেত্রেই শুধু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে, কিডনির রোগীদের জন্য কামরাঙ্গা বিপদজনক। কিন্তু সাধারণভাবে কামরাঙ্গা খেতে কোন সমস্যা নেই। |
গত ১লা আগস্ট ‘ডক্টরস ডায়েরী’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে একটিস স্ট্যাটাস দেয়া হয় যেখানে বর্ণনা দেয়া হয় কামরাঙ্গার বিষাক্ততা ও তার লক্ষণসমূহ। যদিও তাদের এই স্ট্যাটাসটির তথ্যসূত্র হিসেবে তারা লিখেছেন ‘সংগৃহীত’। পরবর্তীতে খুঁজে দেখা যায় হুবাহু একই লেখাযুক্ত ফেসবুক স্ট্যাস্টাস পূর্বেও প্রকাশিত হয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন ছবির সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গোটা ফেসবুক জুড়ে যেগুলোর নির্দিষ্ট কোনো তথ্যসূত্র নেই।
গত ৬ আগস্ট সময় নিউজ ডট টিভি ‘কামরাঙ্গার বিষ ডেকে আনে মৃত্যুও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা বিভ্রান্তিকর। তারা নিউজের ভেতরে কিডনির রোগীদের কথা উল্লেখ করলেও শিরোনামে তা উল্লেখ করেননি যা সুস্থ জনসাধারণের মাঝে আতংক এবং বিভান্তি সৃষ্টি করতে পারে এই ফলটিকে নিয়ে।
কামরাঙ্গা নিয়ে এরকম খবর কিংবা অস্বস্তি এই নতুন নয়। “Star Fruit Can Kill” শিরোনামে ইন্টারনেটে মে ২০০৮ সাল থেকে অনলাইন এবং অফলাইন সর্বত্র প্রচারিত হয়েছে। এর সূত্রপাত এপ্রিল ২০০৮ সালের এপ্রিলে ৬৬ বছর বয়সী মালয়েশিয়ান নাগরিক টাঙ্গ গন শানের মৃত্যুকে ঘিরে, যিনি সেই বছরের ২৯ শে মার্চে কামরাঙ্গা ফল খেয়ে মারা গিয়েছিলেন।
আমাদের সবার পরিচিত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল কামরাঙ্গা। বিষাক্তই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তা কীভাবে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল? ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল নেফ্রলজি-তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে শ্রীলঙ্কার তিনজন রোগীর ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে খালি পেটে অত্যধিক কামরাঙ্গার রস সেবন করায় তাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কামরাঙ্গা রক্তের শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রনে কার্যকর বলে এটি ডায়াবেটিসের পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গবেষকদের মতামত, খালি পেটে বা শরীরে পানিশুন্যতা থাকলে কামরাঙ্গা খাওয়া আসলেই বিপদজনক হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্য সংস্থা ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন (এনকেএফ) ডায়ালাইসিস চিকিৎসা নেয়া বয়স্কদের জন্য তৈরি একটি খাদ্য নির্দেশিকায় কামরাঙ্গাকে সর্বদা এড়িয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছে।
মেডিসিন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম. ফরহাদ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলেছেন, কেউ যদি অত্যধিক পরিমাণে কামরাঙ্গা বা এর রস দীর্ঘদিন গ্রহণ করেন, তাহলে শরীরে অতিমাত্রায় অক্সালিক অ্যাসিড জমে গিয়ে অক্সালেট নেফ্রোপ্যাথি হয়ে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া যাদের ইতিমধ্যে কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা যদি অল্প পরিমাণ কামরাঙ্গা বা এর রস পান করেন, তাহলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি-ও রয়েছে। কামরাঙ্গায় থাকা ক্যারাম্বক্সিন নামক উপাদানের জন্য এটি হয়। তবে, যাদের কিডনির অসুখ নেই, সাধারণ পরিমাণে কামরাঙ্গা খেলে তাদের কোনো ক্ষতি হয় না।
কামরাঙ্গায় অতি অল্প ক্যালরি এবং প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল, আঁশ, এবং এন্টি-অক্সিডেণ্ট রয়েছে। আমাদের দেশে এই ফলের ওষধি গুনগুন সুবিদিত। অতএব, গবেষণালব্ধ তথ্য ও চিকিৎসকদের নির্দেশনা বলছে ফলটি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ক্ষেত্রেই শুধু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে, কিডনির রোগীদের জন্য কামরাঙ্গা বিপদজনক। কিন্তু সাধারণভাবে কামরাঙ্গা খেতে কোন সমস্যা নেই।
তথ্যসূত্র
ডক্টরস ডায়েরী ফেসবুক পেইজ পেইজের পোস্ট
কামরাঙ্গা বিষয়ে স্নুপ্সের প্রতিবেদন
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
|