তসলিমা নাসরিন কি বলেছেন বাংলাদেশে রোজা নিষিদ্ধ করা উচিত?

Published on: March 25, 2021

গত ১৮ ই মার্চ anondobarta.com এবং ১৯ মার্চ, ২০২১ তারিখে crimenewsbd.net এই দুইটি ওয়েব পোর্টাল ‘চীনে রোজা নিষিদ্ধ, বাংলাদেশেও রোজা নিষিদ্ধ করা উচিত: তসলিমা নাসরিন’ শিরোনামে একই খবর প্রচার করেছ । এটি একটি ভুয়া খবর যা ইতিমধ্যে অন্যান্য ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।  অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তসলিমা নাসরিন এমন কোনো মন্তব্য কোথাও করেননি।

খবরের বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এবার রমজান সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমদের রোজা পালন করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তসলিমা বলেন, “কেন আমি রোজা রাখবো? আমি নির্বোধ নই।“

অথচ অনুসন্ধানে দেখা গেছে এই খবরগুলোর বিস্তারিত অংশটি ১০ জুন ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত ‘রোজা সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের বিতর্কিত মন্তব্য’ শিরোনামে জাগো নিউজের একটি খবর থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, “পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমদের রোজা পালন করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তসলিমা বলেন, কেন আমি রোজা রাখবো? আমি নির্বোধ নই।”

 

কী লেখা ছিল জাগো নিউজের খবরে

তবে জাগো নিউজের এই খবরে কোথাও বলা হয় নি তসলিমা নাসরিন বলেছেন বাংলাদেশে রোজা নিষিদ্ধ করা উচিত। সেখানে লেখা আছে, “টুইট বার্তায় চীনের মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াং প্রদেশে রোজা পালনে নিষেধাজ্ঞা জারিরও সমালোচনা করেছেন তসলিমা। তিনি বলেন, ‘চীন রোজা নিষিদ্ধ করেছে। আমি নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। আমি সেই সব দেশের বিপক্ষে; যারা লোকজনকে রোজা রাখতে বাধ্য করে’।”

২০১৬ সালের এই খবরে তসলিমা নাসরিনের একটি ফেইসবুক পোস্টের কথাও বলা হয়, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া অপর এক পোস্টে তসলিমা লেখেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম না হয়েও নামাজ পড়েন, রোজা করেন। যদিও আমরা সবাই বুঝতে পারি এসব তিনি মন থেকে করেন না, মুসলিমদের ভোট পাওয়ার জন্য করেন, কিন্তু তারপরও আমি মনে করি না তার নামাজ রোজায় কারও বাধা দেওয়া উচিত। তার অধিকার আছে যে কোনও ধর্ম পালনের।”

 

তসলিমা নাসরিনের টুইটার এবং ফেইসবুকে কী লেখা আছে

তসলিমা নাসরিনের ভেরিফাইড ফেইসবুক প্রোফাইলে ২০১৬ সালের এই পোস্ট টি পাওয়া গেছে।

তসলিমা নাসরিনের টুইটার একাউন্টে রোজা বিষয়ে ২০১৬ সালে ঠিক এমন কোন পোস্ট দেখা যায় নি যেখানে ইংরেজিতে “কেন আমি রোজা রাখবো? আমি নির্বোধ নই” ঠিক এই কথাগুলো আছে। তবে তিনি রোজা রাখেন না বিভিন্ন সময়ে তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেনএবং রোজার সময়ে খাবার অপচয়ের সমালোচনা করেছেন।

দেখুন এই বিষয়ে তার কয়েকটি টুইট:



 

২০১৯ এর ৯ মার্চ তার ভেরিফাইড ফেইসবুক একাউন্ট থেকে তসলিমা নাসরিন এই বিষয়ে আরেকবার পোস্ট দেন যেখানে তিনি লিখেছেন, “চীনের সরকার চীনের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রোজা নিষিদ্ধ করেছে। চীনের সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দে করছি আমি।” সেখানে তিনি আরও বলেছেন, “রোজা নিয়ে মুসলিম দেশগুলো চীন যা করছে তার উল্টোটা করছে। রোজা না রাখলে বাইরে কিছু খাওয়া, বা কিছু পান করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। যারা রোজা রাখতে চায় তাদের অধিকার আছে রোজা রাখার। যারা রোজা রাখতে চায় না, তাদেরও অধিকার থাকা উচিত রোজা না রাখার।”

পুরনো খবর নতুন করে মিথ্যা শিরোনামে পরিবেশন এবং তার প্রতিক্রিয়া

আসন্ন রোজাকে সামনে রেখে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তসলিমা নাসরিনের এসব পুরনো বক্তব্য নতুন করে পরিবেশন করা হচ্ছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে একটি মিথ্যা শিরোনাম যার সাথে খবরের মূল অংশের কোন মিল নেই। ভুয়া খবরগুলির শিরোনামে দাবি করা হয়েছে তসলিমা নাসরিন চীনে রোজা নিষিদ্ধ হবার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও রোজা নিষিদ্ধ করা উচিত বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে, চীনে রোজার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি অন্যদিকে কোন কোন মুসলিম দেশে বাধ্যতামূলক রোজা পালনের সমালোচনা করেছেন তসলিমা নাসরিন।

তিনি নিজে তার ২০১৬ সালের কিছু বক্তব্য নতুন করে ২০১৯ সালের ফেইসবুকে পোস্ট করেন। টুইটারেও ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিভিন্ন পোস্টে রোজা বিষয়ে তিনি যা যা লিখেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক চলমান। তসলিমা নাসরিন অনেক কিছুই বলেছেন, কিন্তু বাংলাদেশে রোজা নিষিদ্ধ করা উচিত এমন বলেন নি। অথচ এই এক লাইনের ভুয়া দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছে।




 

তথ্যসূত্র 

ক্রাইম নিউজ বাংলাদেশের খবর

আনন্দ বার্তার খবর

রোজা সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের বিতর্কিত মন্তব্য

তসলিমা নাসরিনের ফেইসবুক পোস্ট

তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পোস্ট ২

রোজা সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের বিতর্কিত টুইট

রোজা সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের অন্য একটি টুইট

জাগো নিউজের প্রতিবেদন

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ fb.com/search.ulab

Leave a Reply