বাদুড় কি আসলেই দেখতে পায় না?

সন্ধ্যা নামলেই আকাশে বাদুড়ের ছোটাছুটি প্রায়ই দেখা যায়। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে গেলে এরকম দৃশ্য প্রতিদিনই আমাদের চোখে পড়ে। এর কারণ, চারিদিকে আঁধার নেমে আসলেই বাদুড় শিকারে বের হয়।

বাদুড়দের বিভিন্ন প্রজাতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্যাট কনজার্ভেশন ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে কমপক্ষে ১৩০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু বাদুর ফুল খেয়ে বেঁচে থাকে। কিছু প্রজাতির বাদুড় পোঁকামাকড় খায়; আবার লাতিন আমেরিকার তিনটি প্রজাতি আছে যারা রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।

রাতে চলাফেরায় বাদুড়কে সহায়তা করে ইকো-লোকেশন। অর্থাৎ শব্দ এবং শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে চলাফেরা করে তারা। বাদুড় ওড়ার সময় তার চলার পথের দিকে শব্দ তৈরি করে। সেই শব্দ যদি প্রতিধ্বনি আকারে ফিরে আসে তাহলে তারা বুঝতে পারে যে সামনে একটি বাধা রয়েছে। আর শব্দ ফিরে না আসার মানে তার চলার পথে কোনো বাধা নেই।

তবে প্রজাতিভেদে ইকো-লোকেশন ব্যবহারের ব্যাপারে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। বেশ কয়েক জাতের ফলখেকো বাদুড়েরা ইকো-লোকেশন একেবারে ব্যবহার করেই না বলা চলে। তারা খাবারের সন্ধানে দৃষ্টিশক্তিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।  

খাদ্যাভাস এবং পারিপার্শ্বিকতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বাদুরের দৃষ্টিশক্তি একেকভাবে কাজ করে। ২০০৯ সালে প্লাস ওয়ানে প্রকাশিত একটি জার্নালে এমনটাই বলা হয়েছে। যেমন, দক্ষিণ আমেরিকার Glossophaga soricina এবং মধ্য আমেরিকার Carollia perspicillata নামক বাদুড়ের দুটি প্রজাতির চোখে দিনের বেলা দেখার এবং কয়েকটি রং শনাক্ত করার জন্যে প্রয়োজনীয় রিসেপটর আছে। এই রিসেপটরগুলির কারণে তারা আল্ট্রাভায়োলেট আলো এবং মানুষের দৃষ্টিক্ষমতার বাইরে থাকা বেশ কিছু তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোও দেখতে পায়। দুটি প্রজাতির খাদ্যাভাসে রয়েছে বিভিন্ন ফুল এবং ফলমূল। আল্টাভায়োলেট আলো দেখতে পারার ক্ষমতাটি খাদ্য খুঁজতে গেলে তাদের বেশ কাজে আসে; কারণ অনেকগুলি ফুলে আল্ট্রাভায়োলেট আলো প্রতিফলিত হয়। তাই তারা দূর থেকেই সেসব ফুলকে আলাদা করতে সক্ষম হয়।

২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি জার্নাল থেকে জানা যায়, বাদুড় চলাফেরায় দৃষ্টিশক্তি এবং ইকো-লোকেশন দুটি ক্ষমতাকেই ব্যবহার করে। দুটি ক্ষমতাকে এক সাথে ব্যবহার করায় তাদের আশেপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বেশি ধারণা থাকে। পাশাপাশি কেবলমাত্র চোখে দেখে মাঝেমধ্যে সঠিক দূরত্ব নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তখন ইকো-লোকেশন তাদের বেশ উপকারে আসে।

পোকামাকড় খেয়ে যেসব বাদুড় বেঁচে থাকে তারাও দৃষ্টিশক্তির উপর বেশ নির্ভরশীল। আলো কমতে থাকলে ইকো-লোকেশনের ব্যবহার বাড়ে, তবে শিকারের সময় দুটি ক্ষমতাকেই ব্যবহার করে বাদুড়।

সকল অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে, বাদুড় চোখে দেখতে পায়। শুধু যে দেখতে পায় তাই না, বেশ কয়েক প্রজাতির বাদুড়ের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়েও ভালো। বাদুড় চোখে দেখতে পায় না, এমন ধারণা তাই বৈজ্ঞানিকভাবে মিথ্যা বলে প্রমাণিত।

Leave a Reply