স্কুল বাসের ভিডিওটি কি কানাডার?

ফেসবুকে অনেকেরই হয়তো চোখে পড়েছে হলুদ স্কুল বাসের একটি ভিডিও। ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায় একটি স্কুল বাস রাস্তার পাশে থামছে। থামার সাথে সাথেই বাসটি আশেপাশের গাড়িগুলিকে থামার সংকেত প্রদান করে এবং রাস্তার সব গাড়ি থেমে যায়। ভিডিও যিনি ধারণ করেছেন তিনি পাঞ্জাবী বলছেন, স্কুলবাস বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী কী করছে।

ফেসবুকে শেয়ার করা কিছু পোস্ট

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওটি প্রথমবার আপলোড করেন “পাভিত্তার সিং রোমানা” নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ২২ জুলাই ২০১৮ তারিখে। ঢাকার এয়ারপোর্ট রোডে বাসের নিচে চাপা পড়ে দুই শিক্ষার্থী প্রাণ হারানোর পর এই ভিডিওটি বাংলাদেশী অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।

পাভিত্তার সিংয়ের ভিডিওটি পরবর্তীতে অসংখ্যবার ফেসবুকে পুনরায় আপলোড করা হয় এবং প্রতিবারই সেখানে কানাডার নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ভিডিওটি কানাডার নয়। ভিডিওতে থাকা বাসটিতে লেখা “মন্টগোমেরি কাউন্টি স্কুলস”; আর ভিডিওতে বাসের পেছনে দেখা যায় “ব্রিস্টল স্কয়ার”। এই নামের স্কুল এবং ব্রিস্টল স্কয়ার দুটিই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।

তবে ভিডিওটি যুক্তরাষ্ট্রের হলেও, কানাডায় স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা আসলেই খুব জোরালো। কানাডার “অন্টারিও মিনিস্ট্রি অফ ট্রান্সপোর্টেশন”-এর ওয়েবসাইটে লেখা, প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থী প্রায় ১৬ হাজার স্কুল পরিবহনে যাতায়াত করে। বাচ্চাদের স্কুলে যাবার সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যমগুলির মধ্যে একটি স্কুল বাস।

কানাডায় রাস্তার পাশে স্কুল বাস থামলে তার সামনে এবং পেছনে ২০ মিটারের ভেতর কোনোপ্রকার যানবাহন চলতে পারবে না বলে আইন রয়েছে। রয়েছে আইন ভঙ্গে জরিমানার বিধানও। প্রথমবার আইন ভঙ্গ করলে ৪০০-২০০০ কানাডিয় ডলার এবং পরবর্তী প্রতিবার ১০০০-৪০০০কানাডিয় ডলার; ছয় “ডিমেরিট পয়েন্ট” এবং ছয় মাসের জেলের বিধানও রয়েছে।

কানাডায় স্কুল বাসের আইন নিয়ে সিবিসি নিউজের বানানো গ্রাফিক্স ভিডিও।

তবে কড়া আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে আগ্রহী গাড়িচালকরা কানাডাতেও আছে। জেল-জরিমানাকে উপেক্ষা করেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামানো অবস্থায় পাশ থেকে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে চায় অনেকেই। তবে এটিকে বেশ বড়সড় অপরাধ হিসেবে দেখে কানাডার প্রশাসন।

আইনভঙ্গকারীদের নিয়ে সিটিভি নিউজের ভিডিও প্রতিবেদন।

আইনভঙ্গকারীদের ধরতে স্কুল বাসের “স্টপ”” লেখা সাইনের পাশে দুই দিকে দুটো ক্যামেরা সেট করে রেখেছে কানাডার প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড সরকার। স্কুল বাস থামা অবস্থায় কোনো গাড়ি পাশ কাটিয়ে গেলে গাড়ির নম্বরপ্লেট রেকর্ড হয়ে যায় সেই ক্যামেরায়।

সমস্ত তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে কানাডায় স্কুল বাসের নিরাপত্তার যেসব দাবি করা হয়েছে সেগুলো সত্যি। তবে ভিডিওটি কানাডার ঘটনা হিসেবে আপলোড করা হয়েছে। এই তথ্যটি সঠিক নয়। ভিডিওটি যুক্তরাষ্ট্রের।

Leave a Reply