সরকারি-বেসরকারি আইসিইউতে খরচ কেমন?

Published on: April 24, 2021

এবছর মার্চ মাস থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আইসিইউ শয্যার সংকট৷ সাধারণত গুরুতর অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তুলতে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা ‘আইসিইউ’ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) এর প্রয়োজন হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ন্যুনতম মূল্যে আইসিইউ সেবা দেয়া হলেও বেসরকারি হাসপাতালে এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইসিইউ খরচের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণাও পাওয়া যায় না। ফলে, সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে এরকম সেবা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে অনুযায়ী অর্থ জোগাড় করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফ্যাক্টওয়াচ এর এই প্রতিবেদন মূলত সরকারি বেসরকারি আইসিইউতে দৈনিক খরচ কেমন হয় – সে বিষয়ে একটু ধারণা দেয়ার চেষ্টা। এ সংক্রান্ত সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ক্রাউড সোর্সিং এর মাধ্যমে, অর্থাৎ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির পোস্ট ও কমেন্টবক্স থেকে, সংবাদপত্রে প্রাপ্ত তথ্য এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আইসিইউর সেবা গ্রহণকারীদের সাথে সরাসরি ফোনালাপের মাধ্যমে।

 

কি পরিমাণ আইসিইউ শয্যা আছে বাংলাদেশে?

বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ই এপ্রিলের বুলেটিনের তথ্যে অনুযায়ী সারাদেশে সর্বমোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৮২৫টি। এর মধ্যে ঢাকায় কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি ১০টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ১০৪টি। দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন বলছে, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালের ৪৭৬টি আইসিইউ শয্যাকে কোভিড১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্যে তালিকাভুক্ত করেছে“ যদিও এই সংখ্যার গড়মিল দেখা গেছে বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদনটিতে। বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা উল্লেখ করেছে ৯টি এবং আইসিইউ শয্যার সংখ্যা উল্লেখ করেছে ৩৭৬টি। আমাদের বিচারে বিবিসি বাংলায় উল্লেখিত সংখ্যাটি সঠিক নয়।

 

কেমন খরচে পাওয়া যাচ্ছে আইসিইউ?

হাসপাতাল ভেদে আইসিইউ-র খরচ ভিন্ন ভিন্ন। সরকারী হাসপাতালগুলোতে এই খরচ সাধারণের নাগালের ভেতরে থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসা পেতে গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। কোনো হাসপাতালের ওয়েবসাইটে এই খরচের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেয়া নেই। তবে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে করোনার চিকিৎসা নিয়েছেন এমন কয়েকজনের সাথে ফোনালাপ, ফেইসবুক পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেল ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের আইসিইউর খরচের পরিমাণ। তবে এই খরচ নির্ভর করছে রোগীর শারীরিক অবস্থা ও সে অনুযায়ী চিকিৎসাপদ্ধতির ওপর।

 

হাসপাতালের নাম আইসিইউ’র খরচ
হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ৪০,০০০ টাকা
ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল ২৪,০০০ টাকা
ল্যাবএইড হাসপাতাল ৫০,০০০ টাকা
ইমপালস হাসপাতাল ১,০০,০০০ টাকা
পপুলার হাসপাতাল ১,০০,০০০ টাকা
অ্যাপোলো হাসপাতাল ১,০০,০০০ টাকা
এসপিবিকে হাসপাতাল ৭,০০০ টাকা
আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫০,০০০ টাকা

 

সরকারি হাসপাতালে ২৫ টাকায় আইসিইউ সেবা

গত ১৮ এপ্রিল ২০২১ (রবিবার) শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত বৃহত্তম হাসপাতাল চালু হয়েছে ঢাকার মহাখালীতে। এই হাসপাতালের নাম ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল।’ এই হাসপাতালে  মোট শয্যা থাকছে এক হাজার। আরও থাকছে ২১২ শয্যার কোভিড আইসিইউ ইউনিট, ২৫০ শয্যার কোভিড এইচডিইউ এবং ৫০ শয্যার জরুরি বিভাগ। হাসপাতালটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে। তবে ৫০টি আইসিইউ, ৫০টি কোভিড ইমার্জেন্সি ও ১৫০টি কোভিড আইসোলেটেড রুম থাকবে শুরুতে। মাত্র ২৫ টাকা মূল্যে আইসিইউতে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা মিলবে এই হাসপাতালে।

এবিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের সবার কিন্তু ভর্তি নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে যারা বহির্বিভাগে আসবেন তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে অর্থাৎ ১০ টাকায় টিকিট কেটে চিকিৎসা নিতে পারবেন। আর যদি কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তবে সেক্ষেত্রে বহির্বিভাগের পরামর্শের পরে আরও ১৫ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। অর্থাৎ মোট ২৫ টাকার টিকিট কেটে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন রোগী।’

 

ভেন্টিলেটরের সংখ্যা

গত বছর মহামারি শুরু হওয়ার পরে প্রথমবারের মতো এই চিকিৎসা যন্ত্রের ব্যাপক চাহিদার তৈরি হয়েছে সারা বিশ্বজুড়েই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যেকোনো হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর, সিপিএপি, বাইপ্যাপ ও হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাকে আবশ্যিক মেডিকেল যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এদিকে দ্য ডেইলি স্টার এর একটি প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার ১৬টিরও বেশি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে ভেন্টিলেটরের মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ভেন্টিলেটর-হীন আইসিইউকে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ বলতে রাজী নন। প্রতিবেদনটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে নীচের সারণিতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের ভেন্টিলেটরের সংখ্যা দেয়া হল:

হাসপাতালের নাম আইসিইউর সংখ্যা ভেন্টিলেটরের সংখ্যা
শমরিতা হাসপাতাল ৮টি ১২টি
হাই-কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল ১০টি ৫টি
শিন-শিন জেনারেল হাসপাতাল ৬টি ২টি
ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ২৫টি ১০টি
ধানমন্ডি ক্লিনিক ১৭টি ৭টি
কিওর স্পেশালাইজড হাসপাতাল ৮টি ৫টি
নিউ লাইফ হাসপাতাল ১০টি ৮টি
পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল ৬টি ৪টি
এএমজেড হাসপাতাল ১০টি ৮টি
বেটার লাইফ হাসপাতাল ২৪টি ১২টি
ধানমন্ডি জেনারেল ও কিডনি হাসপাতাল ৭টি ৫টি




 

তথ্যসূত্র

ডিএনসিসি হাসপাতালে ২৫ টাকায় আইসিইউসহ চিকিৎসাসেবা!

ডিএনসিসির কোভিড হাসপাতাল হবে সবচেয়ে বড়, চালু রোববার

করোনা ভাইরাস: বাংলাদেশে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউ’র জন্য হাহাকার

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ fb.com/search.ulab

Leave a Reply