“তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে” শিরোনামে অসংগতিপূর্ণ ভিডিও ভাইরাল

Published on: March 14, 2022

সম্প্রতি “ইউক্রেন থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু। পাক ঘাটি গুড়িয়ে দিল ঝাঁকে ঝাঁকে ভারতের মিসাইল?” এমন শিরোনামে ১০ মিনিটেরও বেশি দীর্ঘ একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে ভিডিওটির একাধিক অসংগতি চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথমত, ভিডিওটি বিকৃত। দ্বিতীয়ত, বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়নি, বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাত্র। তৃতীয়ত, ঝাঁকে ঝাঁকে ভারতের মিসাইলও পাক ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়নি। ভারতের একটি মিসাইল পাকিস্তানের সীমানায় ভূপাতিত হয়েছে ঠিকই, তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এটিকে কারিগরি ত্রুটির কারণে দূর্ঘটনা বলে স্বীকার করেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে, ফ্যাক্টওয়াচ এই ভিডিওকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

 

এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

“Faridpur TV” নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়। ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওটি একটি পুরোদস্তুর টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওর শিরোনামে ইউক্রেন থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু হয়েছে দাবি করা হলেও, ভিডিওতে সরাসরি এমন কোনো দাবি নেই। তবে সেখানে বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত এখন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। এছাড়াও প্রাসঙ্গিক আরো কিছু খবর নিয়ে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওটি একজন সংবাদ পাঠকের সংবাদ পাঠ দিয়ে শুরু হয়। গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের সাহায্যে জানা যায়, সেখানে বিবিসির সাংবাদিক এবং নিউজ প্রেজেন্টার এন্ড্রু প্ল্যান্টের একটি ফুটেজ ব্যবহার করা হয়। এন্ড্রু প্ল্যান্টের এই ভিডিওটি ২০১৮ সালের ২৫ জুন প্রচারিত হয়।

মূলত এই ভিডিওর শুরুতে এন্ড্রু প্ল্যান্টের পুরনো ভিডিওটি যোগ করে দেওয়া হয় এবং সেখানে বাংলা অডিও ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, মূল ভিডিওকে বিকৃত করা হয়েছে।

ভাইরাল ভিডিও থেকে নেওয়া

মূল ভিডিও থেকে নেওয়া

 

এছড়াও ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন ভিজুয়াল এফেক্ট ব্যবহার করার কারণে মূল উৎসটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ভিডিওর ধরণ দেখে ধারণা করা যায় যে, বিভিন্ন এনিমেটেড ভিডিও থেকে ফুটেজগুলো নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ভিডিওতে প্রধান দুইটি দাবির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। যদিও বিস্তারিত ভিডিওতে নিশ্চিতভাবে এমন কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে প্রথমে বিশ্বযুদ্ধ কি এটি জানা জরুরি। যদি কোনো যুদ্ধে পৃথিবীর সব কয়টি দেশ অথবা বেশিরভাগ দেশ সরাসরি জড়িয়ে যায় তখনই তাকে আমরা বিশ্বযুদ্ধ বলতে পারি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও সেখানে রাশিয়া এবং ইউক্রেন ছাড়া অন্য কোনো দেশ সরাসরি যুক্ত হয়নি। অতএব, এটিকে বিশ্বযুদ্ধ বলা যাবে না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই যুদ্ধে যদি ন্যাটো কিংবা আমেরিকা সরাসরি জড়িয়ে যায় তবে এটি বৃহদাকার ধারণ করতে পারে। এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো খবর কোনো গণমাধ্যমে আসেনি।

এ সম্পর্কে বিবিসির একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

 

দ্বিতীয় দাবিতে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের “ঘাটি” গুড়িয়ে দিয়েছে ভারতের মিসাইল। বক্তব্যের শেষে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্নও ব্যবহার করা হয়। বিস্তারিত ভিডিওতে দাবি করা হয়, ভারত পাকিস্তানে সুপারসনিক মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, শিরোনামে থাকা এই দাবিটি বিভ্রান্তিকর। সেখানে পাকিস্তানের ঘাঁটি গুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও মূল ঘটনাটি ভিন্ন।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিসাইল ভূপাতিত হবার ঘটনাটি স্বীকার করেছে। এটিকে দূর্ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলে, কারিগরি ত্রুটির কারণে দূর্ঘটনাবশত একটি মিসাইল পাকিস্তানের সীমানায় ভূপাতিত হয় এবং এর মূল কারণ জানতে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান চালাবে তারা।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশন বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল বাবর ইফতেখার এ বিষয়ে গত  ১০ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, এই ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি তবে একটি বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এছাড়াও এমন দাবির প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টওয়াচের আরেকটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

পরিশেষে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওর শিরোনাম এবং বিস্তারিত অংশে কয়েকটি অসংগতি রয়েছে। প্রথমত সেখানে, বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে যে দাবিটি করা হচ্ছে তা মিথ্যা। দ্বিতীয়ত, ভারত ঝাঁকে ঝাঁকে মিসাইল হামলায় পাকিস্তানের ঘাটি গুড়িয়ে দেয়নি। একটি মিসাইল পাকিস্তানে ভূপাতিত হলেও এটিকে দূর্ঘটনা বলে দাবি করছে ভারত। এছাড়াও সেখানে এন্ড্রু প্ল্যান্টের ২০১৮ সালের সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ভিডিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। উপরোক্ত অসংগতি বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ ভিডিও পোস্টটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply