যাচাই ০১: টিটু রায় নামের একজন হিন্দু ব্যক্তি ইসলাম সম্পর্কে ফেসবুকে অবমাননাকর পোস্ট করেছেন।
মূল পোস্টটি কে করেছেন এমনকি মূল পোস্টটি ও কি ছিলো তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি । টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভি এক রিপোর্টে বলছে, রাকেশ মন্ডল নামের এক ব্যক্তি বাংলেদেশী টিনেজার নামের ফেসবুক গ্রুপে নবী মুহাম্মদ (স) কে বিদ্রুপ করে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
ঐ রিপোর্টটি দেখে ইসলামী আন্দোলন গ্রুপের একজন সদস্য যার নাম মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী (ফেসবুকে মাও: আসাদুল্লাহ হামিদী নামে আছেন) নিজের টাইমলাইনে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যা আবার শেয়ার করেন মোহাম্মদ টিটু নামের একজন( ফেসবুকে এমডি টিটু নামে আছেন)।
মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী’র লেখা যদিও মুছে ফেলা হয়েছিলো কিন্তু একজন ফেসবুক ইউজার এর স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছিলেন যেখানে পোস্টটি আংশিক দেখা যায়। আমাদের দাবী হচ্ছে, এটি যাচাই করা হয়নি কেননা MD Titu নামধারী ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একাত্তর টিভি রিপোর্টে আন্দোলন গ্রুপের সদস্যটির সাক্ষাৎকার ছিলো যা তার ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে।
যাচাই ০২: শান্ত বিক্ষোভকারীদের খুন ও হামলা করলেন পুলিশ।
১০ই নভেম্বর, পোস্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় ৩০টি হিন্দু বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হল। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছিলো, এবং ডেইলি স্টার এর প্রতিবেদন অনুযায়ী হরকলি ঠাকুরপাড়ার বিক্ষোভ এর গ্রুপটি শান্ত ছিলো না।
গ্রামে আগুন দেওয়া ব্যাক্তিদের শনাক্ত করতে পুলিশ এবং সাংবাদিক ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ফুটেজ কিভাবে পরীক্ষা করছেন তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে একাত্তর টিভি।
যাচাই ৩: হিন্দু সম্প্রদায় তাদের নিজেদেরই ঘর জ্বালিয়ে দেয়।
পোস্টটি ঘটনাটির একটি ভিডিও ফুটেজের দিকে ইঙ্গিত করে বলছে যে, পুলিশ একজনের দিকে চিৎকার করছে “ কেন বাড়িগুলা জ্বালিয়ে দিলেন?” কোন প্রমাণাদি পাওয়া সম্ভব হয়নি ঐজন কে যাচাই করার কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ সুপারইনটেন্ডেন্ট এবিএম যাকির হোসেইন বিএসএস কে জানিয়েছেন, “পুলিশ বিক্ষোভ এর সাথে জড়িত প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশের নেওয়া ভিডিও ফুটেজ থেকে এবং কেউই গ্রেফতার এড়াতে পারবে না।”
কিছু ফেসবুক ইউজার ও মনে করেন ত্রাণের জন্যই হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছেন ।
জনপ্রিয় ডানপন্থী ফেসবুক পেইজ বাশেরকেল্লা একটি স্ট্যাটাস বলছে, ঘটনাটি সম্পুর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়েরই সাজানো।
কিছু ফেসবুক ইউজার ও মনে করেন ত্রাণের জন্যই হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছেন ।
যাচাই -৪: টিটু রায় জামিন পাবেন না।
এই সপ্তাহের শুরুতেই গ্রেফতারকৃত টিটু রয়ের জামিন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি হাকিম আরিফুল ইসলাম এর নেতৃত্বাধীন রংপুর কোর্ট রবিবার বিকালে টিটু রয় এর প্রতিনিধি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (BLAST)কে এই রায় দেন। রংপুরে এক দাঙ্গার ঘটনায় রয়কে গ্রেফতার করা হয় যেখানে একজন ইসলামী নেতার নেতৃত্বাধীন হিন্দু বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো । ঘটনাস্থলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু এবং অনেকে আহত হয়।
৫৭ ধারায় রয়কে গ্রেফতার করা হয় ১৩ই নভেম্বর, ২০১৭ তারিখে। ৫৭ ধারা বলা আছে “ যদি কেউ ওয়েবসাইট বা অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রস্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলারর অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যাক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য হয় বা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মধ্য মাধ্যমে কোন ব্যাক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই আইনের আওতায় রয় প্রকৃত অর্থেই যদি অবমাননাকর পোস্ট দিয়ে থাকেন ইসলামকে ঘিরে তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে, ৫৭ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জামিন পেয়েছে। জুলাই এর ২৫ তারিখ, পার্বত্য চট্রগ্রামে চলমান সমস্যা সম্পর্কে বানোয়াট গল্পের অভিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাংলানিউজ২৪.কম অনুযায়ী, তার মামলার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় তার পোস্টে সাম্প্রতিক ঘৃণার উষ্কানী ছিলো। হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও কৃষ্ণ দেবনাথ জামিন এর রায় দিয়েছিলেন।
৫৭ ধারার আওতায় দোষী সাব্যস্ত ব্যাক্তির ১৪ বছরের জেল এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
গত মাসে দ্য ডেইলী স্টারের এক সাক্ষাতকারে আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি একটি বিচারাধীন সিদ্ধান্ত, যা অপরাধের ধরন দেখে একজন ম্যাজিস্ট্রেটই কেবল নিতে পারেন।”
জামিন পাওয়ার আইনি ব্যবস্থা রয়েছে এমনকি অ-জামিনযোগ্য অপরাধে অভিযুক্তরাও এর আওতাভুক্ত। এই আইনে বলা আছে, “ যদি তদন্ত, অনুসন্ধান কিংবা বিচারের কোন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট অফিসার অথবা কোর্ট এর নিকট মামলাটি মনে হয় বাদী অ-জামিনযোগ্য অপরাধ করেছেন তা সাব্যস্ত করবার মতন যুক্তিসংগত কারণ নেই, কিন্তু তার অপরাধের তথ্যের পুনরায় তদন্তের পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে তাহলে তদন্তের মূলতবি ঘোষণা করে বাদীকে জামিন মঞ্জুর করা হবে বাদীর পুনরায় উপস্থিতির জন্য মৃতুদন্ডের বন্ডসই শর্তসাপেক্ষে এবং ঐ অফিসার অথবা কোর্টের বিচক্ষণতার ভিত্তিতে।